বিদ্যুৎ কিভাবে আবিষ্কৃত হয়েছে ?

বিদ্যুৎ কিভাবে আবিষ্কৃত হয়েছে?


 “ হাজারও ইলেকট্রিক শক খাওয়ার বিনিময়ে,

বিদ্যুৎ আবিষ্কারে ভূমিকা রাখলে যে ব্যাঙেরা,

আমরা তোমাদের ভুলব না , আমরা তোমাদের ভুলব না। ”

ইটালির বলোনি শহরে ডাক্তারি পরান এক ডাক্তার। ছোটকালে তার ইচ্ছে ছিল পাদ্রী হবে। কিন্তু বাসার চাপে তা হয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। তাই না পেরে শেষমেশ ডাক্তার হল। ডাক্তার যা কাজ সারাদিন আকাজ করা। আর হাতের সামনে যা পায় তা কাটাকুটি করা। পোকামাকড়, ব্যাঙ, এমনকি মানুষের শরীরটাও ছাড়ে না। নামটা বলে রাখি-লুইজি গ্যালভানি।

একদিন একটা ব্যাঙ কাটাকাটি করে টেবিলের উপরে রেখে দিয়েছিলেন। তার একজন সহকারি একটা ছুবি দিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে অন্যমনস্ক ভাবে ব্যাঙের পা ছুয়ে দিলেন ।ওরে বাবা, এতো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি হয়ে গেল। মরা ব্যাঙটা হঠাৎ করে জেগে উঠলো (পা টা কেঁপে উঠলো)। ভয়ে সে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। তাড়াতাড়ি গ্যালভানি কে ডেকে নিয়ে আসলো। ছুরি দিয়ে স্পর্শ করল আবার একই ভৌতিক কান্ড ঘটলো। এই ভূতুরে ব্যাপার যেনো গ্যালভানিক কে পেয়ে বসলো। এরপর থেকে সে জীবনে যতই মরা ব্যাঙ পেয়েছে সেটার আর রেহাই নেই। তাই উপরে ভালোবেসে তিন লাইন বেসুরা গান লিখলাম। সত্যি কথা বলতে কী এই ব্যাঙদের অবদান কোন অংশে কম না।

 কিভাবে বিদ্যুৎ আবিষ্কার হয়েছে ?

যাহোক তখনকার দিনে স্থির বিদ্যুৎ বলে একটি ধারণা কাজ করতো। ইতিপূর্বে বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন ও উইলিয়াম গিলবার্ট বিদ্যুতের অস্তিত্ব চুম্বকত্ব এবং বজ্রপাতে রয়েছে সেটি প্রমাণ করেন। যদি এ সম্পর্কে ধারণা ভাসা ভাসা ধারণা ছিল শুধুমাত্র বিভিন্ন ধাতু ও পদার্থ ঘষাঘষির উপরে। প্রথমে ভেবেছিলো তার বাসার স্থির বিদ্যুৎ তৈরির যন্ত্র আছে, তাই থেকে সামান্য গিয়ে ব্যাঙের পা টাকে মনে হয় নাচাচ্ছে। কিন্তু দেখা গেল, বাইরে বাগানের লোহার শিকের ঝুলানো ছিল সেটায় ছোঁয়ার সঙ্গে সঙ্গে একইভাবে লাফিয়ে উঠলো।

তখন তিনি তার মত পাল্টে বললেন, ’’আকাশে বিজলী চমকায় এবং এর কারণে বাতাসে সবসময় কিছু বিদ্যুৎ ভেসে বেড়ায় আর সেইগুলো গিয়ে ওই ব্যাঙের শরীরে জমা হয়েছে। কোন ধাতব জিনিস দিয়ে যদি ছড়ানো হয়, তাহলে সেই বিদ্যুৎ বেরিয়ে আসে আর তাতেই পা টা লাফিয়ে উঠেছে।’’

কিন্তু গ্যালভানি মত বেশিদিন ধোপে টিকল না। ব্যাঙের শিরদাঁড়ার ভিতর দিয়ে পিতলের হুক পরিয়ে সেটাকে তিনি টানিয়েছিলেন বাগানের লোহার রেলিং এর সাথে। নানা রকম পরীক্ষা করতে করতে, একসময় তিনি ধাতুর মাথা দুটো বাকি নিয়েছিলেন এবং রেলিংয়ের সাথে মরা ব্যাঙের শরীর জুড়ে দিলেন। আবার একই ঘটনা, লাফিয়ে উঠল। পরীক্ষাটা বাইরে থেকে ঘরের মধ্যে নিয়ে এসে করেও একটি ফল পাওয়া গেলো।

বাতাসের ব্যাপার না। আসল ব্যাপার হলো, দুটো আলাদা ধাতু দিয়ে ব্যাঙকে ছোঁয়া হয় তাহলেই ব্যাঙের শরীর থেকে বিদ্যুৎ বেরিয়ে আসে। তখনো কিন্তু গ্যালভানি ব্যাপারটা পুরোপুরি ভাবে বুঝে উঠতে পারেননি। তিনি ছিলেন ডাক্তার মানুষ। পদার্থবিজ্ঞানে ততটা দক্ষতা ছিল না। স্থির বিদ্যুৎ এর মত ব্যাঙের গায়ের ভিতর এরকম একটি বিদ্যুৎ আছে যাকে বলা হয় জৈব বিদ্যুৎ।শরীর থেকে বেরিয়ে আসে

কিন্তু গ্যালভানি তার অজান্তেই আবিষ্কার করে ফেলে মানুষের তৈরি প্রথম বৈদ্যুতিক ব্যাটারি এবং চলবিদ্যুৎ। যা এক স্থান হতে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হতে পারে। আর ব্যাঙের শরীরে লাগানো দুটো ভিন্ন রকম ধাতুর বিদ্যুৎ প্রবাহের প্রমাণ দিচ্ছে। ব্যাঙের মাংসপেশির কুঁচকে লাফিয়ে ওঠে। এভাবে সত্যি সত্যি বিদ্যুৎ তৈরি হয়।

কিন্তু বিষয়টি স্পষ্ট ভাবে পরিষ্কার হয়নি। এটি আবিষ্কারের 15 বছর পর আলেক্সান্দ্র ভোল্টা যিনি একই দেশের (ইতালি) পদার্থবিদ ছিলেন তিনি বিষয়টি আচ্ করতে পারেন। প্রথমে গ্যালভানির কথা মেনে নিয়েছিল। কিন্তু তারপরে বিদ্যুৎ মাপার যন্ত্র আবিষ্কার করে তাই দিয়ে পরীক্ষা চালাতে গিয়ে দেখলেন, আসলে বিদ্যুৎ তৈরির জন্য ব্যাঙ জরুরী না। তার বদলে যেকোনো ভেজা জিনিস ব্যবহার করলেই চলে। আমরা ভোল্টার এককোষী বিদ্যুৎ ব্যাটারির সাথে পরিচিত আছি। শুধুমাত্র সালফিউরিক অ্যাসিডের দ্রবণে বিভিন্ন দুটি ধাতু যোগ করলে ভোল্টের ব্যাটারি তৈরি হয়। বর্তমানে আমরা বড় বৈদ্যুতিক কোষ তৈরি করতে পারি। এরপর ভোল্টাকে ব্যাটারি তৈরির ভুত ধরলো বিভিন্নভাবে তিনি পরীক্ষা করতে লাগলেন এবং মানব সভ্যতা আরো একধাপ এগিয়ে গেল।

তবে ইতিহাস যে তাদের ভুলে গিয়েছে তা কিন্তু নয়। কীর্তিমান চিরদিনই অমর থাকবে। সেই বিজ্ঞানীর নাম থেকে তৈরি হয়েছে গ্যালভানিক বিদ্যুৎ যাকে আমরা চলবিদ্যুৎ হিসাবে জানি। আর ভোল্টার কথা বলতে হবে না। যারা বিজ্ঞান নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করি, তাঁরা সবাই ভোল্ট এর সাথে পরিচিত। যা ইলেকট্রিক পটেনশিয়ালের একক। আমরা গ্যালভানোমিটার এর সাথে পরিচিত আছি যা গ্যালভানির নাম অনুযায়ী হয়েছে।আমার মনে হয় তারা জীবনে আচ্ও করতে পারেনি যে, তাদের আবিষ্কারের ফলে মানব সভ্যতা এক অনন্য উচ্চতায় চলে যাবে। মার্ক টোয়েনের মতে:

’’’কল্পনা যখন মূল কেন্দ্রবিন্দু বাইরে, তখন শুধু চোখের উপর নির্ভর করে থাকা যায় না।’

তথ্যসূত্র:

১. উইকিপিডিয়া

২. এসো বিজ্ঞানের রাজ্যে

৩. ফিজিকস অফ দ্য ইম্পসিবল


টপিক:

কিভাবে বিদ্যুৎ আবিষ্কার হয়েছে ?

কিভাবে বিদ্যুৎ আবিষ্কৃত হয়েছে ?

যেভাবে বিদ্যুৎ আবিষ্কার হয়েছে 

বিদ্যুৎ আবিষ্কারের ঘটনা

বিদ্যুৎ আবিষ্কারের কাহিনী

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url