বিদেশে এমবিবিএস পড়তে যাওয়ার নিয়ম কানুন এবং সম্পূর্ন গাইডলাইন || MBBS in Foreign country
∆ এমবিবিএস এর পূর্ণরূপ / MBBS FULL MEANING
→ব্যাচেলর অব মেডিসিন, ব্যাচেলর অব সার্জারি (সংক্ষেপে: এমবিবিএস)
→ MBBS stands for Bachelor of Medicine and Bachelor of Surgery.
আজকে আমার এই লেখাটা তাদের উদ্দেশ্যে যারা বিদেশে MBBS/BDS পড়তে যেতে চাও তাদের জন্যঃ
🔴 প্রথমত বিদেশে এমবিবিএস করার জন্য সবচেয়ে সবচেয়ে মূল্যবান কাজ হচ্ছে, বিদেশে যাওয়ার আগে বিএমডিসি (বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল) থেকে Eligibility Certificate নিয়ে আসা ৷ বিএমডিসি ইলিজিবিলিটি সার্টিফিকেট খুবি গুরুত্বপূর্ন বিদেশে এমবিবিএস পড়তে আসা প্রতি টা স্টুডেন্টের জন্য ৷
বিএমডিসি (বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল) নীতিমালাঃ
১) এখন থেকে বিদেশে গিয়ে এমবিবিএস ডিগ্রি নিতে চাইলেও পাস করতে হবে বাংলাদেশের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায়। এ জন্য ন্যূনতম ৪০ নম্বর পেতে হবে ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীদের। এরপর বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) থেকে ইলিজিবিলিটি সার্টিফিকেট নিতে হবে ৷
২) স্টুডেন্ট কে অবশ্যই এইচএসসির পর দু বছরের মাঝেই BMDC Eligibility Certificate নিয়ে বিদেশে মেডিকেলে পড়া শুরু করতে হবে ৷ বাংলাদেশের সেকেন্ড টাইম পরিক্ষার পর দু বছর হয়ে গেলে এরপর কাউকে Eligibility Certificate দিবে না বিএমডিসি ৷ যদি অনুমতি দিতো বিএমডিসি তাহলে বুড়ো বয়সেও মানুষ বিদেশ থেকে এমবিবিএস পড়ে আসতো 😂
So এইচএসসির পর দু বছরের মাঝেই Eligibility Certificate নিয়ে বিএমডিসি অনুমোদিত মেডিকেল ভার্সিটি/কলেজে পড়তে হবে ৷
🔴 বিএমডিসি এই বছর থেকে সারা বছর ইলিজিবিলিটি সার্টিফিকেট দিবে না ৷ যেমন গত জানুয়ারি মাসেও দেয় নি ৷ তখন বলেছে মেডিকেলের সার্কুলার হলে পরে দিয়েছে ৷ মানে ফেব্রুয়ারির ২৮ তারিখের পর থেকে দেয়া শুরু করেছে ৷ বিডির মেডিকেল ভর্তি শেষ হয়ে গেলে আবার বিএমডিসি ইলিজিবিলিটি দিতে চাইবে না ৷
৩) এরপর আপনি যে দেশে পড়তে যাচ্ছেন বা যে মেডিকেল কলেজে পড়তে যাচ্ছেন, সেই মেডিকেল কলেজ বিএমডিসির লিস্টেট বা অনুমোদন আছে কিনা সেটা জেনে নিতে হবে । কম টিউশন ফি শুনেই নিম্ম মানের ভার্সিটি গুলোতে ভর্তি হওয়া যাবে না ৷
___ উপরের বিষয় গুলো পালন করলে আপনি দেশে এসে ডাক্তারি করার বৈধতার সার্টিফিকেট মানে বিএমডিসি রেজিং নম্বর পাওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে বিড়াম্বিত হতে হবে না ৷
🔴 BMDC Requirements for Eligibility Certificate -
1. Original SSC/ Equivalent Certificate & Mark sheet with Photocopy.
2. Original HSC/ Equivalent Certificate & Mark sheet with Photocopy
3. Two copies of recent passport size photograph attested on back side by Registered Medical Practitioners or by 1st Gazetted Officer.
4. Birth Registration Certificate with Photocopy
5. Eligibility Certificate fee Tk 1000/= (0ne thousand) only to be paid by bank draft / pay order/ Cash, payable to Bangladesh Medical and Dental Council.
🔴 অনেকে বলতে পারেন ভাইয়া ওমুক কে তো দেখলাম ৯ পয়েন্টের কম রেজাল্টে বিদেশে পড়তে গিয়েছে ৷
__ জ্বী অবশ্যই বিদেশে এমবিবিএস ৮ পয়েন্ট দিয়েও পড়া যায় ৷ কিন্তু বাংলাদেশে ডাক্তারি করতে হলে, বিএমডিসির অনুমোদন পেতে চাইলে, অবশ্যই ৯ পয়েন্ট লাগবে এসএসসি এইচএসসি দুটো মিলিয়ে ৷
রেজাল্ট কম হলে বিএমডিসি অনুমতি ও এলিজিবিলিটি সার্টিফিকেট পাবেন না ৷ সো কম রেজাল্টে বিদেশে মেডিকেলে পড়ে গেলেও বাংলাদেশে এসে বৈধ্য ভাবে ডাক্তারি করতে পারবেন না ৷ বিএমডিসির আইনগত নিবন্ধন ছাড়া কেউ বাংলাদেশে বৈধভাবে ডাক্তারি চর্চা করতে পারবে না ৷ তাই বিদেশে মেডিকেলে পড়তে আসার আগে অবশ্যই বিএমডিসি থেকে অনুমতি ও একটা এলিজিবিলিটি সার্টিফিকেট আনতে হবে ৷
🔴 বর্তমানে অনেকেই বাংলাদেশের প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ গুলোতে পড়তে পারে না, এর সবচেয়ে বড় কারন এডমিশনের সময় একসাথে কলেজ বেদে ১৭-২২ লাখ টাকা ডোনেশন দিতে হয়, এবং প্রতি মাসে ৮/১০ হাজার করে বেতন দিতে হয় ৷ কিন্তু বিদেশে এই ভেজাল নেই ৷ প্রতি ৬ মাস পরপর সেমিষ্টার হিসাবে বা ১ বছর পরপর টিউশন ফি দেওয়া যায় ৷ এর ফলে ফ্যামিলিতে এডমিশনের সময় প্রেসার পরে না ৷ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান রাও সহজে ডাক্তার হতে পারে ৷ তাই সবাইকে সঠিক তথ্য দেয়ার জন্যই আজকের এই পোস্ট ৷
🔴 তোমরা যারা বাংলাদেশের মেডিকেল এডমিশন টেস্টে পাস করেছো মানে 40 মার্ক পেয়েছো তোমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো থাকলে দেশেই ভালো প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ গুলোতে ভর্তি হতে ট্রাই করো ৷ সর্বনিম্ন ৪০ মার্কস লাগে বাংলাদেশে বেসরকারি মেডিকেলে পড়তে ৷
__ এরপর আসি যারা ৪০ মার্কস পাও নি তারা কি করবে ? তাদের জন্য ও অপশন আছে, তবে সেটা বাংলাদেশে না, বিদেশে এমবিবিএস । তবে বিদেশে এমবিবিএস পড়তেও হলেই বিএমডিসি (বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল) থেকে eligibility certificate নিতে হবে ৷ এই বিষয়ে উপরে বিস্তারিত বলেছি ৷
🔴 এরপর আসি কোন কোন দেশে এমবিবিএস কম খরচে পড়তে পারবা ?
__ আসলে বাংলাদেশের মতো খরচ এবং বাংলাদেশের থেকে কম খরচের দেশগুলোর মধ্যে কিরগিজস্তান/ তাজিকিস্তান/ রাশিয়া/ মিশন/ চায়না/ ইউক্রেন ৷ এই কয়েকটা দেশেই শুধু মাত্র ২০/২৫/৩০/৪০ লাখের ভিতরে এমবিবিএস/বিডিএস পড়া সম্ভব ।
🔴 যুদ্ধের কারণে ইউক্রেন বন্ধ , অন্যদিকে করনার জন্য গত দুবছর যাবত চীনের বর্ডার বন্ধ ৷ চীনে ভর্তি হলে অনলাইন ক্লাস । চীনে যেতে পারবে না বর্ডার বন্ধ ৷ অনলাইনে ডাক্তার হওয়া আর ইউটিউব দেখে ডাক্তার হওয়া একি কথা ৷
বাকি থাকে রাশিয়া, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্থান, মিশর ৷ এগুলোতে যেতে পারো ৷ বাট অবশ্যই ভালো মানের টপ মেডিকেল ভার্সিটি গুলোতে এডমিশন নিও ৷ এই সকল কান্ট্রি গুলোতে এমবিবিএস/বিডিএস পড়ার জন্য (আইইএলটিএস,টোফেল) স্কোর বা এডমিশন টেস্ট এর প্রয়োজন হয় না ৷
🔴 আমার পরামর্শঃ
বিদেশে এমবিবিএস পড়তে যাওয়ার আগেই সকল দিক বিবেচনা করে নিবেন ৷ যারা বিদেশে এমবিবিএস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা অনুগ্রহ করে কোন ভূয়া এজেন্টের ধান্দাবাজের লোভনীয় প্রচারণায় বিশ্বাস করবেন না ৷ ব্যাক্তির মাধ্যমে ভর্তি না হয়ে সরাসরি বাংলাদেশী বৈধ্য এজেন্সী অফিসের মাধ্যমে এপলাই করুন ৷ যাতে করে ভবিষ্যৎে কোন প্রকার সমস্যা হলে ধরতে পারেন ৷
মনে রাখবেন "দুষ্ট লোকের মিষ্ট কথা তিক্ত তাহার ফল" অতএব অসাধু এজেন্ট দ্বারা হয়রানির স্বীকার হওয়া থেকে সর্তকতা অবলম্বন করুন ৷ অন্যথায় ভবিষ্যৎ এ আপনাকে অনুশোচনা করতে হবে ৷ নিজে সর্তক হোন, পাশাপাশি অন্যকেও এইরকম হয়রানির স্বীকার হওয়া থেকে রক্ষা করুন ৷
বিদেশে এমবিবিএস করতে আসলে, কোনভাবেই কোন এজেন্সি বা ব্যাক্তির সাথে আগে কোন প্রকার টাকা পয়সা লেনদেন করবেন না, যদি আগে টাকা চায় তাহলে মনে করবেন ভুয়া ৷ এডমিশন ও ভিসা হওয়ার পরে সকল টাকা দিবেন ৷ এছাড়া ইউনিভার্সিটির টিউশন ফি, হোস্টেল ফি, সকল টাকা নিজে গিয়ে নিজে হাতে গিয়ে জমা দিবেন ৷
এই বিষয়গুলোই মেইনটেইন করলে পরবর্তী পাঁচ বছরের শিক্ষাজীবন খুব সুন্দর এবং উপভোগ্য হবে একজন মেডিকেল শিক্ষার্থীর জন্য ৷
যদি দেশের বাহিরে এমবিবিএস পড়ার জন্য কোনো তথ্য বা হেল্প প্রয়োজন হয় তাহলে আমাকে ইনবক্স করতে পাবো, যদি ফ্রি থাকি অবশ্যই হেল্প করার চেষ্টা করবো ৷
লেখকঃ
মোস্তাক আহাম্মেদ শান্ত
ইন্টার্ন চিকিৎসক/মেডিকেল শিক্ষার্থী
চায়না থ্রি গরজেস বিশ্ববিদ্যালয়
হুবেই, চীন ৷