স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে পড়তে গেলে কী কী লাগে?
স্কলারশিপ কখন পাওয়া যায় ?
এমন একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশে অনার্স মাস্টার্স শেষ করে তারপর বাইরে পড়তে যাবার কথা ভাবা হতো। এখন সময় অনেক বদলে গেছে। যে যার মতো করে আগে থেকেই দরকারী সব তথ্য নিয়ে নিজের পরিকল্পনাকে পাকাপোক্ত করে রাখছেন। অতি উৎসাহী অনেকে আবার অনার্স প্রথম বর্ষ থেকেই প্রিপারেশন শুরু করছেন। অনেকে এইচএসসি পাস করেও স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে পড়তে যাচ্ছেন।
এইচএসসির পর বিদেশে স্কলারশিপ
আপনি যদি একাদশ-দ্বাদশ বা সমমানের কোন লেভেলে পড়েন তাহলে আপনি পরীক্ষার পর SAT দিয়ে আমেরিকায় আন্ডারগ্র্র্যাডে ভর্তি হতে পারেন। সেক্ষেত্রে দরকার হবে ল্যাংগুয়েজ টেস্ট আয়েল্টস বা টোফেল। তবে মনে রাখবেন, আমেরিকায় আন্ডারগ্র্যাজুয়েটে স্কলারশিপ পাওয়া যায়না বললেই চলে। মোটামুটি চার মাসের প্রস্তুতি নিয়ে এস-এ-টি দিয়ে ভালো স্কোর তুলে আমেরিকায় আবেদন করতে পারেন।অনার্স প্রথম বর্ষে থাকাকালীন অনেকেই এক বছর লস দিয়ে ভালো করে SAT পড়ে আমেরিকায় আন্ডারগ্র্যাজুয়েটে চেষ্টা করেন। সেক্ষেত্রে আগেই বলা হয়েছে, টোফেল/আয়েলন্টস এগুলো পড়তে পারেন এবং খুব ভালো করে আমেরিকার আন্ডারগ্র্যাজুয়েটের জন্য আপনার উপযোগী কিছু বিশ্ববিদ্যালয় খুঁজতে হবে।
মনে করি, বাংলাদেশে আপনি এসএসসি পাশ করে কলেজে ভর্তি হলেন, তারপর একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণী পাশ করে এইচএসসি পরীক্ষাও শেষ করলেন।
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল তো প্রকাশ হবার প্রথম ধাপটি শেষ হলো। এখন উচ্চশিক্ষার জন্য পথ বাছাই করে নেয়ার পালা। দেশে পড়াশোনার সুযোগ আছে সত্য। তবে বর্তমানের প্রেক্ষাপটে উচ্চমাধ্যমিকের পরেই দেশের বাইরে পড়াশোনা করতে যাওয়া সবচাইতে উত্তম । উচ্চমাধ্যমিকের পর কেবল মাত্র IELTS দিয়েই দেশের বাইরে পড়াশোনা করতে যাওয়া যায়। বেশ কিছু দেশে আবার বৃত্তিরও সুযোগ আছে। কিউএস টপ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাংকিংয়ে মালয়েশিয়ার ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে যার বেশিরভাগই হচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। মালয়েশিয়াতে আমাদের দেশ থেকে প্রচুর শিক্ষার্থী পড়াশোনা করতে যান কিন্তু সঠিক তথ্যের অভাবে অনেকেই মালয়েশিয়াতে গিয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হন যেগুলোতে পড়াশোনার মান আশানুরূপ নয়। আপনি বিজ্ঞান, মানবিক কিংবা ব্যবসায় যে কোনো বিভাগের শিক্ষার্থী হোন না কেন মালয়েশিয়াতে আপনার পড়াশোনার প্রচুর সুযোগ রয়েছে। মালয়েশিয়াতে পড়াশোনার জন্য বরাবরই উত্তম হচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। পড়াশোনার মাধ্যম কেবল ইংরেজি। আমাদের এই ফাইলে মালয়েশিয়া বাছাইকৃত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনার সুযোগ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য আছে। অন্যের সাহায্য ছাড়াই নিজে নিজে আবেদন করে নিজেরাই পড়াশোনা করে যেতে পারবেন ।
আমেরিকায় স্কলারশিপ পাওয়ার উপায়
যদি আপনার দৃষ্টি থাকে আমেরিকার দিকে, তাহলে আমেরিকান মাপকাঠিতে বলতে গেলে, আপনি হাই স্কুল শেষ করলেন। বাংলাদেশে আমরা যাকে ভার্সিটির আন্ডার গ্র্যাজুয়েট লেভেলের ভর্তি বলি, আমেরিকায় ওরা এটাকে বলে “কলেজ অ্যাডমিশন”। লক্ষ্য করুন, কলেজ শব্দটির প্রচলিত অর্থ বাংলাদেশে ও আমেরিকায় কিন্তু আলাদা। যা হোক, বাংলাদেশে যেমন প্রত্যেক ভার্সিটি তার নিজের মতো করে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করে এবং ওই ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবার জন্য আপনাকে ভার্সিটির ক্যাম্পাসে সশরীরে উপস্থিত হতে হয়, আমেরিকায় এটা একটু ভিন্ন ভাবে ঘটে। ওদের একটা বোর্ড আছে, নাম হলো “কলেজ বোর্ড” যারা “এসএটি” নামে একটা পরীক্ষা নেয় সারা দুনিয়ার বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রে। ওই এসএটি পরীক্ষার স্কোরই আসলে আমেরিকান কলেজগুলোতে (মানে, আন্ডারগ্র্যাজুয়েট লেভেলের) অ্যাডমিশনের অন্যতম মানদণ্ড হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
SAT কি ?
**SAT** এর পুরো নাম আগে ধরা হতো Scholastic Aptitude Test বা Scholastic Assessment Test. এখন এটার পুরো কোন নাম হিসাবে ব্যবহারের বদলে স্রেফ এস.এ.টি এভাবে বলা হয়। যদি আপনি বাংলাদেশে উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি বা সমমান) কিংবা ইংলিশ মিডিয়াম থেকে এ লেভেল পাশ করার পরে আমেরিকায় আন্ডারগ্র্যাজুয়েট কলেজে ভর্তি হতে চান তাহলে অ্যাডমিশনের রেকয়্যারমেন্ট হিসাবে আপনাকে এই পরীক্ষা দিতে হবে।
GRE / GMAT
এসএটি লাগে হলো আন্ডারগ্র্যাজুয়েট লেভেলে ভর্তির জন্য। কিন্তু আপনি যদি মাস্টার্স অথবা পিএইচডি লেভেলে ভর্তি হতে চান, তাহলে যে পরীক্ষা লাগে সেটা হলো জিআরই অথবা জিম্যাট। উদাহরণ হিসাবে চিন্তা করুন, বাংলাদেশের যে কোন সাবজেক্টেই আপনি ব্যাচেলর পাশ করুন না কেন, আইবিএ তে এমবিএ কোর্স করতে হলে আপনাকে ওদের নিজেদের আয়োজিত একটা ভর্তি পরীক্ষায় বসতে হবে। জিআরই বা জিম্যাট হলো ঠিক সেরকমই মাস্টার্স লেভেলের পরীক্ষা। জিআরই, জিম্যাট, এসএটি এই পরীক্ষাগুলোকে সাধারণত: স্ট্যান্ডার্ড টেস্ট বলে। ঠিক কী কারণে স্ট্যান্ডার্ড টেস্ট বলে সে ব্যাপারে এক এক রকম মত আছে। তবে যেহেতু দুনিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে লেখাপড়া করে আসা এক এক ব্যাকগ্রাউন্ডের স্টুডেন্টদেরকে একটি অভিন্ন মানদণ্ডে মাপার পরীক্ষা বা স্ট্যান্ডারডাইজ করার পরীক্ষা, সে কারণেও এদেরকে এক সাথে স্ট্যান্ডার্ড টেস্ট বলা যেতে পারে।
SAT পরীক্ষা কিভাবে হয় ?
এস-এ-টি পরীক্ষা হয় কাগজ কলমে। বাংলাদেশের তিনটি স্থানে (ঢাকায় নটরডেম কলেজ, আমেরিকান ইন্টা: স্কুল ও চট্টগ্রামে গ্রামার স্কুল) বছরের নির্দিষ্ট কতগুলো দিনে হয়। আর জিআরই বা জিম্যাট পরীক্ষা হয় সারা বছর জুড়েই, সপ্তাহের চার দিন, বনানীর অ্যামেরিকান অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন এ, দিতে হয় কম্পিউটারে। এ বিষয়ে আমরা এই পাতায় পরবর্তিতে বিস্তারিত আলোচনা করবো। এসএটি, জিআরই এবং জিম্যাটের প্রশ্নগুলো কিন্তু কোন নির্দিষ্ট সাবজেক্ট থেকে আসে না। যেমন, আপনি ডাক্তার বা কেমিক্যালি ইন্জিনিয়ার হবার কারণে যে বিশেষ সুবিধা পাবেন, তা কিন্তু না। প্রধানত: অংক এবং ইংরেজী থেকে প্রশ্ন আসে। সাথে যাচাই করা হয় আপনি কত দ্রুত কোন প্যাসেজ পড়ে অর্থ উদ্ধার করতে পারেন, এবং আপনার বিশ্লেষণী ক্ষমতা কেমন। অবশ্য এসএটি-১ এবং সাবজেক্ট জিআরই নামে ভিন্ন এক ধরণের পরীক্ষা আছে, যেগুলো হয় নির্দিষ্ট সাবজেক্ট (যেমন, পদার্থবিদ্যা) এর উপরে।
মাস্টার্স বা গ্র্যাজুয়েট স্কলারশিপ প্রস্তুতি
যদি আপনি মনে করেন অনার্স পুরো শেষ করে গ্র্যাজুয়েট লেভেলে আমেরিকায় যাবেন, তাহলে এই লেভেল থেকে ভোকাবুলারি ছাড়া আর কিছুই পড়ার দরকার নেই। বরং, আপনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন অনার্সের জিপিএ যতটা সম্ভব ভালো রাখা যায়। এই একই পরামর্শ চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত সবার। মনে রাখবেন, জিআরই একাধিকবার দেওয়া যায়; খারাপ স্কোরগুলো গোপন রেখে সবচেয়ে ভালোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো যায়। কিন্তু অনার্সের জিপিএ একবার খারাপ হয়ে গেলে সেটা টেনে তুলতে বহু ঝক্কি পোহাতে হয়।
অনার্স পড়ছেন যারা :
কোর্সের প্রধান পড়া পড়ুন, ভালো করে পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ উঁচু রাখার চেষ্টা করুন। হায়ার স্টাডির অংশ হিসাবে যা করতে পারেন তা হলো ভোকাবুলারির দুই একটা বই কিনে পড়া শুরু করা এবং প্র্যাকটিস করা। ভালো ইংরেজী লেখার অভ্যেস এখন থেকেই গড়ে তুলুন। ক্লাসের পরীক্ষা-অ্যাসাইনমেন্ট এগুলোর চাপ একটু কমা মাত্রই জিআরই পড়া শুরু করে দিন। বাজার থেকে বেশ কিছু ভালো বই কিনুন |
ETS অ্যাকাউন্টে জিআরই অ্যাকাউন্ট করে রাখুন, টোফেলের অ্যাকাউন্টও করে ফেলুন (যদি টোফেল দিতে চান)। সেই সাথে কোন গবেষণা প্রকল্পের সাথে যুক্ত থাকুন। এমন ভাবে সবকিছু প্ল্যান করে অগ্রসর হোন যাতে অনার্স শেষ হবার পরপরই অথবা আগের কোন ব্রেকের মধ্যে জিআরই পরীক্ষা দেওয়া হয়ে যায়।
আমেরিকার অধিকাংশ গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তির অন্যতম শর্ত হলো জিআরই বা জিম্যাটের মত স্ট্যান্ডার্ডাইজড টেস্ট এর স্কোর থাকতে হবে। জিআরই বা জিম্যাট পরীক্ষার স্কোরের পাশাপাশি আরও প্রয়োজন হয় ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্ট স্কোর আয়েল্টস বা টোফেল। মনে রাখবেন, জিআরই স্কোর একটি অন্যতম ফ্যাক্টর, যার উপর ফান্ডিং ও অ্যাডমিশন নির্ভর করে। তবে তাই বলে এটাই যে একমাত্র ফ্যাক্টর, তা ভাবা ঠিক হবে না।
অ্যাডমিশন কমিটি আপনার জিআরই স্কোরের সাথে আরো যে বিষয়গুলো দেখবে সেগুলো হচ্ছে:
* আপনার আন্ডারগ্র্যাডের সিজিপিএ
* আপনার ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্ট (আয়েল্টস বা টোফেল) স্কোর কেমন
* আপনার ওই সাবজেক্টের গবেষণা বা থিসিসের কাজের গুরুত্ব কতখানি। সোজা কথায়, গবেষণায় আপনার দখল কতখানি
* কারা আপনার জন্য রেকমেন্ডেশন লিখেছে, সুপারিশের যোগ্য হিসাবে তারা আপনাকে কতখানি ভালো বলেছে
* আপনার ব্যক্তিগত স্টেটমেন্ট (SOP, Statement of Purpose) কতখানি
যদি C-GPA কম থাকে
যদি জিপিএ কম থাকে তাহলে তা ভালো জিআরই দিয়ে মেক আপ করা যেতে পারে। ‘যেতে পারে’ মানে আপনার একটা সুযোগ আছে এটাকে হাইলাইট করে অ্যাডমিশন কমিটির সুনজরে আসার। কিন্তু ভালো জিআরই মানেই যে ফান্ডিং সহ অ্যাডমিশনের গ্যারান্টি তা ভাবার সুযোগ নেই।
স্কলারশিপের জন্য ভাষা দক্ষতা বা ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্ট
আরেকটা কথা মনে রাখতে হবে, অনেক ইউনিভার্সিটি রয়েছে যাদের অ্যাডমিশন রেকয়্যারমেন্টের মধ্যে জিআরই বা জিম্যাটের দরকারই হয় না। তবে এমন ইউনিভার্সিটি দেখে থাকে আপনার ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্ট স্কোর। বিশেষ করে আমেরিকার বাইরের দেশগুলো যেমন, ইউকে, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশের ইউনিভার্সিটিগুলো বিশেষ ভাবে আয়েল্টস স্কোরের উপর গুরুত্ব দিয়ে থাকে।
তাই বিশ্বের যেকোন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ফান্ডেড অ্যাডমিশন পেতে হলে অবশ্যই ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টে বিশেষ করে আয়েল্টস-এ ভালো স্কোর থাকা আবশ্যক।
GRE কাদের জন্য ?
সায়েন্স হোক আর হিউম্যানিটিজ হোক, এমবিএ বাদে যে কোন সাবজেক্টে পড়ালেখার জন্য জিআরই লাগে। আপনি এর আগে কোন সাবজেক্টে পড়ে এসেছেন তা মুখ্য নয়। উদাহরণ স্বরূপ, আপনি এর আগে বিবিএ পড়ে এসেছেন এবং এখন গণযোগাযোগ মাধ্যমের উপর পিএইচডি করতে চান। এক্ষেত্রে আপনি সায়েন্সের সাবজেক্টে না পড়লেও আপনার জিআরই করা লাগবে।
দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দেশেরি ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাকগ্রাউন্ডের স্টুডেন্টরা অন্য সব সাজজেক্টের স্টুডেন্টদের চেয়ে বেশি পরিমাণে জিআরই দিয়ে আমেরিকা গিয়েছে বলে সাধারণ মানুষের মনের মধ্যে একটা ধারণা জন্মেছে যে জিআরই বুঝি শুধুমাত্র ইঞ্জিনিয়াররা বা সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের স্টুডেন্টরাই দিতে পারে। আসলে এটা সঠিক নয়।
GRE নাকি GMAT ?
উচ্চ শিক্ষার ব্যাপারে আর্টস (Arts), মেডিকেল (Medical) এবং কমার্স বা বিজনেস ব্যাকগ্রাউন্ডের (Business Background) স্টুডেন্টদের মাথায় সবচেয়ে বেশি যে প্রশ্ন ঘুরপাঁক খায় তার মধ্যে অন্যতম জিআরই দিবেন নাকি জিম্যাট দিবেন।
তবে একান্তই যদি আপনার MBA করার ইচ্ছা না থাকে সেক্ষেত্রে চোখ বন্ধ করে জিআরই দিতে পারেন। জিআরই দিয়ে সকল শাখায় (MBA এবং LAW বাদে) অ্যাডমিশন নিতে পারবেন। অন্যদিকে জিম্যাট শুধুমাত্র MBA ছাড়া অন্য কোন ফিল্ডে আবেদন করার জন্য কাজে আসবে না। তাই জিআরই অথবা জিম্যাট যেটি নির্বাচন করেন না কেন একটু ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়া ভালো। খুব অল্পসংখ্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে যারা MBA এর বাইরে তাদের সামাজিক বিজ্ঞান (Social Science) বিভাগ/স্কুলে জিআরই’র বাইরে জিম্যাট স্কোর গ্রহণ করে থাকে।
স্কলারশিপের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় খোঁজা
জিআরই টোফেল শেষ করার পর পরই বিশ্ববিদ্যালয় খোঁজার কাজে নেমে পড়তে হবে। জিআরই স্কোর, টোফেল স্কোর এবং আপনার অধ্যায়ণরত বিষয়ের সাথে মিল রেখে খোঁজাখুঁজি করা উত্তম। ধরা যাক আপনার জিআরই স্কোর ৩১০, তাহলে আপনাকে ৩০০ থেকে ৩০৫ এই জিআরই স্কোর চাচ্ছে এরকম বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করতে হবে। চাইলে ৩১০ স্কোরের বিশ্ববিদ্যালয় খোঁজ করতে পারেন তবে সেক্ষেত্রে আপনার অ্যাডমিশনি এবং ফান্ডিং পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে।
সবচেয়ে ভালো উপায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম (আপনার বিষয় অনুসারে), নূন্যতম যোগ্যতা জিআরই, টোফেল স্কোর , ডেডলাইন ইত্যাদি লিখে এক্সেল ফাইল অনুসারে সাজিয়ে রাখা।
বিশ্ববিদ্যালয় খোঁজার পর পরই দেখতে হবে প্রফেসরের সাথে আপনার প্রোফাইল কতোখানি মিলে। যে প্রফেসরের সাথে আপনার প্রোফাইলের মিল থাকবে, বুঝতে সেসব প্রফেসর আপনার জন্য পটেনশিয়াল প্রফেসর। কাজেই অন্য আর একটি এক্সেল ফাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের পাশে পটেনশিয়াল প্রফেসরদের তালিকা রেখে দিতে পারেন। পরবর্তীতে এই তালিকা অনুযায়ী আপনি প্রফেসরকে মেইল করতে পারেন।
SOP
বিশ্ববিদ্যালয়, সাবজেক্ট এবং প্রফেসর- এই তিনটি জিনিসের সন্ধান পাওয়ার পর পরই আপনার কাজ হবে Statement of Purpose (SOP) প্রস্তুত করা। যারা একাধিক বিষয়ের জন্য আবেদন করবেন তাদের অবশ্যই ভিন্ন ভিন্ন প্রফেসর এবং সাবজক্টের জন্য আলাদা SOP লিখতে হবে। ভুলেও কপি পেস্ট করা যাবে না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। ইংরেজি বানান এবং গ্রামারের দিকে খেয়াল রাখা জরুরি।
LOR
Letter of Recommendation (LOR)* অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আপনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রফেসর, প্রজেক্ট সুপারভাইজার অথবা ডিপার্টমেন্টের প্রধাণের কাছ থেকে এই লেটার সংগ্রহ করতে পারবেন। মনে রাখা ভালো অনেক বিশ্ববিদ্যালয় কাগজে LOR এর বদলে অনলাইনে FOR চাইতে পারে।
ব্যাটে বলে মিলে গেলে এবং প্রফেসরের কাছ থেকে গ্রীণ সিগন্যাল পেলে কোনো চিন্তা ভাবনা না করে সরাসরি আবেদন করে দিতে পারেন।
আবেদনের সাথে দরকারি ডকুমেন্টস, যেমন- জিআরই ASR, টোফেল ASR, ট্রান্সক্রিপ্ট, SOP, LOR ইত্যাদি সঠিক সময়ে পাঠানো দরকারী।
আবেদন পাঠানোর পর কি করা উচিত
আবেদন পাঠানোর পরের কাজ অপেক্ষা করা। প্রফেসরের সাথে হাই-হেলো করা। সাধারণত ডেডলাইনের অনেক আগেই কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাডমিশন অফার লেটার দিয়ে থাকে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ডেডলাইন পর্যন্ত অপেক্ষা করে।
অ্যাডমিশন অফারের পরের কাজ প্রসেরের সাথে যোগাযোগ করা। ফান্ডিং এর বিষয় নিয়ে আলোচনা করা। অনেক ক্ষেত্রে অ্যামিডশন অফারের সাথে ফান্ডিং প্রাপ্তির অফার চলে আসতে পারে। সেক্ষেত্রে নতুন করে প্রফেসরকে ফান্ডিং এর জন্য আলাদাভাবে নক করার প্রয়োজন হয় না।
সব দেন-দরবার কিছু ঠিক থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আপনার নামে একটি আই-২০ প্রস্তুত করবে। যেখানে আপনার আনুষঙ্গিক খরচপাতি এবং খরচপাতির উৎস উল্লেখ থাকবে।
অনেক সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইমেইল করে সফট কপি পাঠিয়ে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে ভিসা অ্যাম্বেসি মুখোমুখি হওয়ার জন্য অরিজিনাল কপি দরকার হয়, যা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আপনাকে কুরিয়ার যোগে পাঠাবে।
সেভিস ফি : আই-২০ হাতে পাবার পর অ্যাম্বেসির মুখোমুখি হবার আগে আপনাকে সেভিস ফি প্রদান করতে হয়। মনে রাখা ভালো ভিসা ইন্টারভিউ মুখোমুখি হবার কপক্ষে ৩ দিন আগে সেভিস ফি প্রদান করা থাকতে হবে।
সেভিস ফি হয়ে যাওয়ার পর পরই DS 160 ফর্ম ফিলাপ করতে হবে। এরপর APPLY FOR A U.S. VISA এখানে গিয়ে আপনাকে ভিসা অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে নির্দিষ্ট স্লিপ দেখিয়ে ইস্টার্ন ব্যাংকের ৫০ টি নির্ধারিত শাখায় জমা ভিসা ফি জমা দিতে পারবেন। ভিসা জমা শেষে অনলাইন প্রোফাইলে ঢুকে আপনার মতো করে ভিসা ইন্টারভিউয়ের জন্য সময় নিয়ে নিতে হবে।
সফলভাবে ভিসা ইন্টারভিউ হয়ে গেলে ভিসা কর্তৃপক্ষ আপনাকে ভিসা প্রদান করবে। পরবর্তীতে আপনার কাজ হবে সুবিধামতো সময়ের প্লেনের টিকেট ক্রয় করা | ভিসার পাবার পর খেয়াল রাখতে হবে আপনার সেমিস্টার কবে, কখন থেকে শুরু হচ্ছে। আপনাকে সে সময়ের হিসেব করে প্লেনে চড়তে হবে।
লিখেছেনঃ আইমান কাশিফ
সংযোজন ও সংশোধনঃ নাইমুর হাসিব আলভী