উত্তরাধিকার আইন
উত্তরাধিকার আইন কি ?
উত্তরাধিকার আইন মৃত ব্যক্তির সম্পত্তিতে তার উত্তরাধিকারীদের উপর বর্তানোর যাবতীয় বিধি-বিধান নিয়ে আলোচনা করে। সুতরাং এ আইনের গুরুত্ব সহজেই অনুমেয়। উত্তরাধিকারের বিষয়গুলো একেবারেই পারিবারিক বলে পারিবারিক আইন অনুযায়ীই এগুলো পরিচালিত হয়। মুসলমান, হিন্দু, খৃষ্টান, বৌদ্ধ ও অন্যান্য প্রায় সব ধর্মাবলম্বীদের, এমনকি উপজাতীয়দেরও উত্তরাধিকার সংক্রান্ত বিধি-বিধান আছে।
মুসলমানদের উত্তরাধিকার সম্পর্কিত বিধানগুলো কোরআন ও হাদীসের আলোকে তৈরী। এ উত্তরাধিকার আইনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নাতীত হলেও মৃত ব্যক্তির মৃত ছেলের সন্তান-সন্তানাদির উত্তরাধিকার বিষয়ে আলোচনা করে, এমন একটি বিধান নিয়ে মুসলমান সমাজে প্রশ্ন ছিলো। কিন্তু এ বিষয়ে সংস্কার সাধনের চেষ্টা বা উদ্যোগ নেয়া হয়নি। শেষ পর্যন্ত ষাটের দশকের গোড়ার দিকে এ সংক্রান্ত বিধানটির সংস্কার সাধন করা হয়েছে, যার বিস্তারিত আমরা জানতে পারবো পরবর্তী আলোচনাগুলোতে।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উত্তরাধিকার বর্তানোর নিজস্ব নিয়ম ও মতবাদ রয়েছে। ভারতে হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের ব্যাপক সংস্কার করা হলেও বাংলাদেশের হিন্দু উত্তরাধিকার আইনের বিধানগুলো এখনো মান্ধাতা আমলের। সনাতন যুগের এ আইন প্রয়োগের ফলে বাংলাদেশে হিন্দু মেয়েদের অধিকার থেকে বঞ্চনার ইতিহাস তৈরী করছে। এ নিয়ে থাকবে তুলনামুলক আলোচনা।
খৃষ্টান, বৌদ্ধদেরও উত্তরাধিকার আইন ও তার প্রয়োগ সম্পর্কিত বিধি-বিধানের পাশাপাশি গুরুত্বসহ বিষয়ভূক্ত হয়েছে উপজাতীয় সমাজে প্রচলিত উত্তরাধিকারের নিয়মগুলো।
আরো একটি বিষয়, বর্তমানে ধর্মীয় গন্ডি পেরিয়ে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মধ্যে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার প্রবণতা লক্ষনীয়। সুতরাং থাকছে ১৮৭২ সালের বিশেষ বিবাহ আইনে সম্পন্ন বিবাহিত দম্পত্তিদের সন্তানদের উত্তরাধিকার সংক্রান্ত আইনের বিস্তারিত আলোচনা।
বাংলাদেশে উইলবিহীন অবস্থা এবং উইল সংক্রান্ত উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আইন সংহতকরণকল্পে প্রণীত আইন৷
যেহেতু বাংলাদেশে উইলবিহীন অবস্থা এবং উইল সংক্রান্ত উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আইন সংহত করা প্রযোজনীয় ও সমীচীন; সেইহেতু এতদ্বারা নিম্নরূপ আইন করা হইলঃ
ভাগ - ১
প্রাথমিক
ধারা-১৷ সংক্ষিপ্ত শিরোনাম৷- এই আইন উত্তরাধিকার আইন, ১৯২৫ নামে অভিহিত হইবে৷
ধারা-২৷ সংজ্ঞা৷ - বিষয় বা প্রসঙ্গের পরিপন্থি কোন কিছু না থাকিলে এই আইনে-
(ক) ''প্রশাসক'' অর্থ নির্বাহক না থাকিলে মৃত ব্যক্তির ভূ-সম্পত্তি পরিচালনার জন্য উপযুক্ত কর্র্তৃপক্ষের দ্বারা নিযোগপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তিকে বুঝাইবে;
(খ) ''কডিসিল'' (Codicil) অর্থ উইল সংক্রান্ত কৃত কোন দলিল এবং উহার ব্যাখ্যা, পরিবর্তন, বা সংযোজন এবং উইলের অংশবিশেষ গঠন করে বলিয়া বিবেচিত হইবে;
(খখ) ''জেলা জজ'' অর্থ মূল এক্তিয়ারসম্পন্ন প্রধান আদালতের বিচারক বুঝাইবে৷
(গ) ''নির্বাহক'' অর্থ উইলকারীর নিয়োগ দ্বারা মৃত ব্যক্তির সর্বশেষ উইলের কার্যকরণ করার জন্য বিশ্বাস বলে অর্পিত কোন ব্যক্তি;
(ঘ) ''বাংলাদেশ খৃস্টান'' অর্থ বাংলাদেশের একজন নাগরিক যিনি অবিমিশ্র এশিয়াটিক বংশোদ্ভূত বলিয়া নিজেকে দাবী করেন এবং যিনি খৃস্ট ধর্মের কোন অংশে অনুগত;
(ঙ) ''নাবালক'' অর্থ ১৮৭৫ সনের সাবালকত্ব আইন সাপেক্ষে কোন ব্যক্তি, যিনি উক্ত আইনের অর্থানুসারে সাবালকত্ব অর্জন করেন নাই, এবং অন্য কোন ব্যক্তি, যাহার বয়স ১৮ বত্সর হয় নাই এবং ''নাবালকত্ব'' অর্থ উক্ত কোন ব্যক্তির মর্যাদা;
(চ) ''প্রবেট'' অর্থ উইলকারীর ভূ-সম্পত্তির পরিচালনা মঞ্জুর সম্পর্কিত উপযুক্ত এক্তিয়ারসম্পন্ন আদালতের সীল মোহরে সত্যায়িত উইলের অনুলিপি;
(ছ) ''উইল'' অর্থ উইলকারীর সম্পত্তি বিষয়ে তাহার ইচ্ছার আইনগত ঘোষণা বুঝাইবে, যাহা তিনি তাহার মৃত্যুর পরে কায॔কর হইবে মর্মে ইচ্ছা পোষণ করেন৷
ধারা-৩৷ এই আইনের প্রয়োগ হইতে কোন জাতি, গোষ্ঠী বা উপজাতিকে অব্যাহতি দানে সরকারের ক্ষমতা৷- (১) সরকার সরকারী গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা ১৮৬৫ সনের ১৬ই মার্চ হইতে ভূতাপেক্ষভাবে কিংবা ভবিষ্যত্ হইতে এই আইনের নিম্নলিখিত কোন বিধানাবলীর কার্যকরতা হইতে অর্থাত্ ৫ ধারা থেকে ৪৯ ধারা পর্যন্ত, ৫৮ ধারা থেকে ১৯১ ধারা পর্যন্ত, ২১২, ২১৩ ধারা এবং ২১৫ ধারা থেকে ৩৬৯ ধারা পর্যন্ত কোন গোষ্ঠী, সম্প্রদায় বা উপজাতিকে কিংবা উহার কোন অংশকে, অব্যাহতি দিতে পারিবে যাহার ক্ষেত্রে সরকার উক্ত বিধানাবলী বা আদেশে উল্লেখিত কোন একটি প্রযোজ্য হওয়া অসম্ভব বা অসমীচীন বলিয়া বিবেচনা করে৷
(২) একইরূপে প্রজ্ঞাপন দ্বারা সরকার উক্ত কোন আদেশ প্রত্যাহার করিতে পারিবে, কিন্তু এমনভাবে নয় যে যাহাতে উক্ত প্রত্যাহারের কোন ভূতাপেক্ষ কার্যকরতা থাকে৷
(৩) এই ধারায় উল্লিখিত অব্যাহতিপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণকে ''অব্যাহতিপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণ'' হিসাবে উল্লেখিত৷
ভাগ - ২
স্থায়ী নিবাস সম্পর্কিত
ধারা ৪৷ এই অধ্যায়ের প্রয়োগ৷- মৃত ব্যক্তি হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ বা জৈন হইলে এই অধ্যায় প্রযুক্ত হইবে না৷
ধারা ৫৷ মৃত ব্যক্তির যথাক্রমে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার নিয়ন্ত্রণকারী আইন৷-(১) মৃত্যুর সময়ে যেখানেই স্থায়ী নিবাস (domicile) থাকুক না কেন মৃত ব্যক্তির বাংলাদেশে অবস্থিত স্থাবর সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার বাংলাদেশের আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হইবে৷ (২) মৃত্যুর সময় যে দেশে স্থায়ী নিবাস থাকিবে মৃত ব্যক্তির অস্থাবর সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার ঐ দেশের আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হইবে৷
উদাহরণ
(অ) বাংলাদেশে স্থায়ী নিবাস থাকাকালে 'ক' ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ডে অস্থাবর সম্পত্তি এবং বাংলাদেশে স্থাবর ও অস্থাবর উভয় প্রকার সম্পত্তি রাখিয়া ফ্রান্সে মারা গেল৷ এক্ষেত্রে সমস্ত সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার বাংলাদেশের আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হইবে৷
(আ) 'ক' একজন ইংরেজ ব্যক্তি৷ ফ্রান্সে স্থায়ী নিবাস থাকাকালে বাংলাদেশে তাহার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি রাখিয়া বাংলাদেশে মারা গেল৷ অস্থাবর সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার বিষয়টি ফ্রান্সে বসবাসরত অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী একজন ইংরেজ ব্যক্তির অস্থাবর সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার ফ্রান্সে প্রচলিত যে বিধিমালা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, উক্ত বিধিমালা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হইবে, এবং স্থাবর সম্পত্তির উত্তরাধিকার বাংলাদেশের আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হইবে৷
আলোচনা
এই ধারার প্রথম অংশে বলা হয়েছে যে, মৃত্যুর সময় একজন ব্যক্তির স্থায়ী আবাসভূমি বাংলাদেশ বা অন্য দেশে যেখানেই থাকুক না কেন বাংলাদেশে অবস্থিত তার স্থাবর সম্পত্তির উত্তরাধিকার বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী হবে৷
দ্বিতীয় অংশে বলা হয়েছে, মৃত্যুর সময় একজন ব্যক্তির যেদেশে স্থায়ী আবাস থাকবে অস্থাবর সম্পত্তিতে তার উত্তরাধিকার ঐ দেশের আইন অনুযায়ী হবে৷
ধারা-৬৷ শুধুমাত্র একটা স্থায়ী আবাস অস্থাবর সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার প্রভাবিত করে৷ - অস্থাবর সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারের উদ্দেশ্যে একজন ব্যক্তির কেবলমাত্র একটি স্থায়ী আবাস থাকিতে পারিবে৷
আলোচনা
এই ধারাটি মূলতঃ Somerville Vs. Somerville (5 Ves. 750) মামলার ভিত্তিতে এই আইনে স্থান পেয়েছে৷ কোন উদ্দেশ্যে একজন ব্যক্তির একাধিক স্থায়ী আবাস থাকতে পারে কিন্তু অস্থাবর সস্পত্তিতে উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে তার একটিমাত্র স্থায়ী আবাস থাকতে পারবে৷
এই কনটেন্টটিতে উত্তরাধিকার আইন, ১৯২৫ এর বর্ণনা রয়েছে।
মুসলিম উত্তরাধিকার আইন
মুসলিম আইনে মৃত ব্যক্তির সম্পদের সুষম বন্টনের জন্য সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে, মুসলিম আইনে পরিষ্কার ভাবে বলা আছে মৃত ব্যক্তির সম্পদ তাঁর উত্তরাধিকারীরা কে কিভাবে পাবেন। আজ দি ঢাকা টাইমসের এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে মুসলিম আইন অনুযায়ী একজন মৃত ব্যক্তির উপর তাঁর উত্তরাধিকারীরা কে কতটা সম্পদের অধিকারী হবেন সে বিষয়ে।
একজন মুসলমান যদি মারা যায় তবে তাঁর সম্পদ বন্টনের আগে কিছু বিষয়ে তাঁর আত্মীয় স্বজনদের বিশেষ মনোযোগ রাখতে হয় এবং ঐ সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেই কেবল মৃত ব্যক্তির সম্পদ ভাগ বাটোয়ারা করা যাবে।
এবার চলুন জেনে নেয়া যাক একজন মুসলমানের মৃত্যুর পর তাঁর সম্পদ ভাগের আগে যা করনীয়ঃ
১) যদি মৃত ব্যক্তির পর্যাপ্ত সম্পদ থাকে তবে তাঁর সম্পদ থেকে তাঁর দাফন কাফনের ব্যবস্থা করা।
২) মৃত ব্যক্তির কোন প্রকারের ঋণ কিংবাদ ধার দেনা থাকলে তা ঐ ব্যক্তির সম্পদ থেকে পরিশোধ করার ব্যবস্থা করা।
৩) মৃত ব্যক্তির স্ত্রীর দেনমোহোর পরিশোধ হয়েছে কিনা দেখা যদি না হয়ে থাকে তা পরিশোধ করা।
৪) মৃত ব্যক্তি যদি কোন হেবা বা দান কিংবা অসিহত করে যান তবে উল্লেখিত সম্পত্তি দান করে দেয়া।
এবার যদি উপরের কাজ সমূহ করার পরে মৃত ব্যক্তির কোন সম্পদ অবশিষ্ট থাকে তবে অবশিষ্ট সম্পত্তি তাঁর উত্তরাধিকারীদের মাঝে বন্টন করতে হবে। তবে বন্টনের ক্ষেত্রে মুসলিম আইন অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট পরিমাণ উল্লেখ আছে।
চলুন এবার জেনে নেয়া যাক মৃত ব্যক্তির সম্পদের উপর তাঁর উত্তরাধিকারীরা কে কি পরিমাণ পাবেনঃ
স্বামীঃ স্বামী দুই ভাবে স্ত্রীর উপরে সম্পত্তি পাবে,
- যদি মৃত ব্যক্তির সন্তান-সন্ততি থাকে তবে স্বামী পাবে এক চতুর্থাংশ।
- যদি মৃত ব্যক্তির সন্তান-সন্ততি না থাকে তবে স্বামী পাবে অর্ধেক সম্পত্তি।
স্ত্রীঃ মৃত ব্যক্তির স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তি দুইভাবে পাবেন-
- যদি মৃত ব্যক্তির এবং তাঁর স্ত্রীর সন্তান বা পুত্রের সন্তান থাকে তবে স্ত্রী স্বামীর সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ (১/৮) পাবেন।
- যদি মৃত ব্যক্তি এবং তাঁর স্ত্রীর সংসারে কোন সন্তান না থাকে তাহলে স্ত্রী মোট সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ (১/৪) পাবেন।
পুত্রঃ ছেলেরা মৃতের উপরে সকল ক্ষেত্রেই সম্পদ পেয়ে থাকে, মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির ক্ষেত্রে সকলের অংশ ভাগের পর অবশিষ্ট সকল অংশ ছেলে এবং মেয়ে পাবে। তবে এই ক্ষেত্রে ছেলে সম্পদে যে পরিমাণ অংশ পায় মেয়েরা সম্পদের উপরে ছেলের অর্ধেক পরিমাণ পাবে। যদি মেয়ে না থাকে তবে বাকী সম্পূর্ণ অংশ ছেলে পাবে।
মেয়েঃ মুসলিম সম্পত্তি আইন অনুযায়ী একজন মেয়ে ৩ নিয়মে মৃতের সম্পদ পেয়ে থাকে।
- যদি একজন মেয়ে হয় তবে দুইভাগের একভাগ (১/২) পাবে।
- যদি একাধিক মেয়ে হয় তবে সবাইকে তিন ভাগের দুই ভাগ (২/৩) দেয়া হবে।
- যদি মৃত ব্যক্তির ছেলে মেয়ে উভয়েই থাকে তবে ছেলে যে পরিমাণ পাবে মেয়ে তাঁর অর্ধেক পাবে।
বাবাঃ মৃত ব্যক্তির সম্পদের উপর তাঁর বাবা ৩ প্রকারে সম্পদ পাবেন,
- যদি মৃত ব্যক্তির পুত্র, পুত্রের পুত্র কিংবা আরও নিচে পুত্রের পুত্রের পুত্র যত নিচেই হোক না কেন থাকে তবে মৃত ব্যক্তির পিতা পাবেন সম্পদের ছয় ভাগের এক ভাগ (১/৬)।
- যদি মৃত ব্যক্তির কোন পুত্র কিংবা নিন্মগামী পুত্র না থাকে কেবল কন্যা থাকে তবে ছয় ভাগের এক ভাগ ( ১/৬) পাবেন এবং কন্যাদের ও অন্যান্যদের দেয়ার পর যে সম্পত্তি অবশিষ্ট থাকবে তাও পাবেন।
- যদি মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান না থাকে তবে বাদ বাকী অংশীদারদের দেয়ার পর সকল সম্পত্তি বাবা পাবেন। মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান না থাকলে যদি বাবাও না থাকে তবে তাঁর জীবিত ভাই পাবে, ভাই না থাকলে ভাইয়ের সন্তান পাবে।
মাতাঃ মৃত ব্যক্তির মা তিন ভাবে সম্পদ পাবেন
- যদি মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি, যত নিম্নেরই হউক, থাকলে অথবা যদি পূর্ণ, বৈমাত্রেয় বা বৈপিত্রেয় ভাই বা বোন থাকে তবে মাতা ছয় ভাগের এক ভাগ ( ১/৬) পাবেন।
- যদি মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি, যত নিম্নের হউক না থাকে এবং যদি একজনের বেশি ভাই বা বোন না থাকে তবে মাতা তিন ভাগের এক ভাগ ( ১/৩) পাবেন।
- যদি মৃত ব্যক্তির কোন সন্তান বা পুত্রের সন্তানাদি, যত নিম্নের হউক না থাকে অথবা কমপক্ষে দুইজন ভাইবোন না থাকে এবং যদি মৃত ব্যক্তির স্বামী বা স্ত্রী অংশ দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকবে তার তিন ভাগের এক ভাগ ( ১/৩) মাতা পাবেন।
এবার চলুন মুসলিম আইনের কিছু সাধারণ বিষয় জেনে নেয়া যাকঃ
অনেকেই ভাবেন পিতার সম্পদে সন্তানকে বঞ্চিত করতে ত্যাজ্য করা যায় অর্থাৎ ত্যাজ্য করলে সন্তান সম্পদ থেকে বঞ্চিত হবে, কিন্তু বিষয়টি ঠিক নয় কেউ চাইলে কাউকে সম্পদ থেকে বঞ্চিত করতে ত্যাজ্য করতে পারবেনা।
অনেক ক্ষেত্রে সৎ ছেলে মেয়ের বিষয়টি আসে, কিন্তু ইসলামে পরিষ্কার বলা আছে সৎ ছেলে মেয়ে কখনোই সৎ বাবা মায়ের সম্পদের অংশীদার হবেনা একই সাথে সৎ বাবা মাও সৎ ছেলে মেয়ের সম্পদের অংশীদার হবেনা।
ইসলামিক সরিয়া আইনে বলা আছে যদি পিতা বেঁচে থাকতে কোন বিবাহিত সন্তান স্ত্রী এবং সন্তান রেখে মারা যায় তবে ঐ পিতার মৃত্যুর পর পিতার বর্তমানে মৃত সন্তান কোন সম্পদ পাবেনা, কিন্তু ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশে উত্তরাধিকার সংক্রান- বিধান সংশোধন করে মৃত ব্যক্তির সম্পদে বিবাহিত মৃত পুত্রের ওয়ারিশরা অংশ পাবে এই বিধান সংযুক্ত করা হয়।
হিন্দু উত্তরাধিকার আইন
বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্তানে হিন্দুদের মধ্যে দু'ধরনের উত্তরাধিকার পদ্ধতি চালু রয়েছে। যথা-দায়ভাগ পদ্ধতি এবং মিতাক্ষরা পদ্ধতি। দায়ভাগ পদ্ধতি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে প্রচলিত আছে। দায়ভাগ মতে পিন্ডদানের অধিকারী ব্যক্তি মাত্রই মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারী। যারা পিন্ড দিতে পারে তারাই মৃত ব্যক্তির ত্যাজ্য সম্পত্তির ওয়ারিশ বলা হয় । ভারতের অন্যান্য প্রদেশ এবং পাকিস্তানে মিতাক্ষরা পদ্ধতি প্রযোজ্য হয়ে থাকে ।
উত্তরাধিকারীদের ক্রমতালিকা:
উত্তরাধিকারীদের অধিকারের
স্বাভাবিকভাবে পুত্রই পিতার সমগ্র সম্পত্তির একক উত্তরাধিকারী হয়। পুত্র একাধিক হলে তারা সকলে মিলে পিতার সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার পায়। যে পুত্র মৃত তার পুত্র অর্থাত্ পৌত্র উত্তরাধিকার পায়। পুত্র, পৌত্র এবং প্রপৌত্র যেহেতু সমভাবে পিন্ড দেবার অধিকারী তাই তারা উত্তরাধিকারী হয়। কিন্তু পুত্র জীবিত থাকলে তার পুত্র অর্থাত্ পুত্র পিন্ড দিতে পারেনা। এবং সে কারণে পুত্রের জীবমানে পৌত্র উত্তরাধিকার পায়না। প্রপৌত্রের ক্ষেত্রে ও একই কথা।
১৯৩৭ সনে সম্পত্তির উপর হিন্দু নারীর অধিকার আইন প্রবর্তিত হবার পর মৃতের বিধবা, পুত্রের বিধবা এবং পৌত্রের বিধবা উত্তরাধিকার পায়, এভাবে প্রথম যে ছয়জন মৃতের সম্পত্তির উত্তরাধিকার পায়, তারা হচ্ছে:
১. পুত্র
২. পৌত্র অর্থাত্ নাতি
৩. প্রপৌত্র অথাত্ নাতির পুত্র
৪. মৃতের বিধবা স্ত্রী
৫. মৃতের মৃত্যুর পূর্বে মৃত পুত্রের বিধবা স্ত্রী [যিনি সম্পত্তি রেখে মারা গেছেন তার আগে মৃত তার পুত্রের বিধবা স্ত্রী]
৬. মৃতের পুর্বে মৃত পুত্রের পুর্বে মৃত পুত্রের বিধবা স্ত্রী [যিনি সম্পত্তি রেখে মারা গেছেন তার আগে তার মৃত পুত্রের এবং এর আগে ও মৃত পুত্রের বিধবা স্ত্রী]
পৌত্র ও প্রপৌত্রের ক্ষেত্রে প্রতিনিধিত্বের মতবাদ প্রচলিত। পুত্র জীবিত না থাকলে তার পুত্র অথাত্ প্রতিনিধিত্ব করে পুত্রের পুত্র। অথাত্ মৃতের পৌত্র বেঁচে না থাকলে তার পুত্র অথাত্মৃতের প্রপৌত্র তার প্রতিনিধিত্ব করে। এরা অংশ পিছু উত্তরাধিকার পায়।
বিধবাদের কথা বলা যায় যে, আগে পুত্র, পৌত্র প্রভৃতি থাকলে বিধবা আর কোন উত্তরাধিকার পেত না।
বর্তমানে অর্থাত্ ১৯৩৭ সনের সম্পত্তির উপর হিন্দু নারীর অধিকার আইন পাস হবার পর বিধবাবৃন্দ জীবন স্বত্ব উত্তরাধিকার পায়। এ আইন পাস হবার পর, বিধবা একের অধিক হলে সবাই একত্রে এক পুত্রের সমান অংশ জীবনসূত্র পায়। পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্র কেউ না থাকলে মৃত স্বামীর সমস্ত সম্পত্তি তার বিধবা জীবন স্বত্বে পায়। বৈধ প্রয়োজনে বিধবার সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারে।
মৃতের বিধবা যেভাবে সম্পত্তি পায় মৃতের পুত্রের বিধবা বা তার পৌত্রের বিধবা বা প্রপৌত্রের বিধবা একইভাবে সম্পত্তি পায়। একটি উদাহরণ দেয়া গেল:
'ক' নামক একজন হিন্দু তার বিধবা স্ত্রী এবং পূর্বে মৃত পুত্রের এক বিধবা রেখে মারা যান৷ তার সম্পত্তি পাঁচ ভাগ হবে এবং ঐ পাঁচ জন সমান অংশে তা পাবে। 'ক 'তিন পুত্র, তার বিধবা স্ত্রী এবং পূর্বে মৃত পুত্রের এক পুত্র এবং তার মৃত পুত্রের বিধবা রেখে মারা যান৷ এখানে ক এর ত্যক্ত সম্পত্তি পাঁচ ভাগ হবে। প্রত্যেক পুত্র এবং তার ক এর বিধবা এই ৪ জনের প্রত্যেকে ১/৫ অংশ পাবে। অবশিষ্ট ১/৫ অংশ তার মৃত পুত্রের পুত্র ও বিধবার মধ্যে সমানভাবে অর্থাত্ এরা এ ক্ষেত্রে প্রত্যেকে ১/১০ অংশ করে পাবে।
উপরে যে ছয়জনের কথা বলা হলো অথাত্ পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্র, বিধবা, মৃত পুত্রের বিধবা এবং মৃত পৌত্রের বিধবা, এরা উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে গন্য। এরা বেঁচে থাকলে আর কেউ মৃতের সম্পত্তি পায় না।
৭. কন্যার স্থান :
উপরের ছয়জন না থাকলে কন্যা পিতার সম্পত্তি পায়। সে এ কারণে সম্পত্তি পায় যে তার মৃত পিতাকে পিন্ড দেবার জন্য সে পুত্র প্রসব করতে সক্ষম। জীমুতবাহন স্পষ্টভাবে ঘোষনা করেছেন যে সে কন্যা উত্তরাধিকার পাবে না যে পুত্রবতী নয় বা পুত্র জন্ম দিবার শক্তি যার নাই বা যে বন্ধ্যা এবং যে শুধু কন্যাবতী। তবে যে কন্যা কোন পুরুষ শিশুকে পুত্ররূপে দত্তক নেবার জন্য সম্ভাবনা পূর্ণ, সে উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হয় না। সুতরাং সকল কন্যা পিতার ত্যক্ত স্বত্বে সম্পত্তি পায় না। প্রথমে আসে অবিবাহিতা কন্যা। কন্যা অবিবাহিতা থাকলে, সে একাই পিতৃত্যক্ত সকল সম্পত্তি সমুদয়ভাবে পায়; ঐরকম কেউ না থাকলে পায় পুত্রবতী কন্যা। পুত্রবতী কন্যা, বন্ধ্যা বা পুত্রহীনা কন্যাক বঞ্চিত করে৷ অবিবাহিত বা পুত্রবতী কন্যা না থাকলে এবং সন্তানহীনা বিধবা কন্যা থাকলে পিতৃব্য পুত্র অথাত্ চাচার ছেলে সম্পত্তি পাবে। বর্তমানকালে প্রশ্ন উঠছে, হিন্দু কন্যার অধিকার থাকা উচিত কিনা তার পিতৃত্যক্ত সম্পত্তির উপর, তার পিতার পুত্রের সাথে অথাত্ তার ভাই এর সাথে। বাংলাদেশের সংবিধানে নারী পুরুষের সমতার অধিকার বিধৃত। এ সাংবিধানিক মৌলিক অধিকারের ভিত্তিতে নারী পুরুষের সমতার কন্যার দাবি উত্থান হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে কতিপয় হিন্দু পন্ডিত বলেন: কন্যা সম্পর্কে হিন্দু আইনের যে মহতি ধারণা বিদ্যমান তা প্রথমে বুঝে নেওয়া প্রয়োজন।বিবাহের সাথে সাথেই কন্যা তার স্বামীর শ্বশুরের পরিবারে চলে যায়। স্বামী শ্বশুরের পরিবারের সে অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যতদিন তার বিয়ে হয় নি ততদিন তার পিতা তাকে পালন করেছে, বিবাহের পর যে সম্পত্তি তার ভাইয়েরা ভোগ করেছে তার উপর সে লোভ রাখবেনা। দাবির অধিকার থাকলে কখনো লোভ চাড়া দিয়ে উঠতে পারে। ফলে ভাইদের সাথে তার সম্পর্কের মধুরতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। প্রাচীনকালের মুনি ঋষিগণ পারিবারিক বন্ধনকে মহাপবিত্র মনে করতেন, যে নীতিতে সে বন্ধন অটুট থাকে সেই নীতির নিদেশ তারা দিয়েছেন। কিন্তু বর্তমানে হিন্দু নারীর অধিকার এর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, তাই নারীর অধিকার সংরক্ষণে তার পিতার সম্পত্তিতে ভাগ পাওয়াটা জরুরী হওয়ায় প্রাচীন কালের মুনি ঋষিদের মতানুযায়ী বন্ধনকে অটুট রেখে কন্যা পুত্রের পাশাপাশি তার পিতার সম্পত্তির অংশীদার হতে পারে।
৮. কন্যার পুত্র বা দৌহিত্র বা নাতি :
জীমুতবাহন বলেন কন্যা পিতার ত্যক্ত সম্পত্তিতে এ কারণে উত্তরাধিকার পায় যে সে এমন একজনের মাতা হতে পারে যে তার মাতামহের পিন্ড দান করতে পারে, ঠিক সে কারণে কন্যার পুত্র অথাত্ দৌহিত্রমৃতের পিতা এবং অন্যান্য আত্নীয় জীবিত থাকা সত্বেও মাতামহের সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার পায়। তবে দৌহিত্রের পুত্র উত্তরাধিকার পায় না কারণ সে পিন্ড দেবার অধিকারী নয়
৯. পিতা:
৮ নম্বর বর্ণিত দৌহিত্র এর সাথে সাথে অধঃস্তন পুরুষের মধ্যে যারা পিন্ড দিতে পারেন । তাদের তালিকা শেষ হয়ে যাওয়াতে উত্তরাধিকার উধ্বগামী হয়। ধর্মীয় কারণে পিতা উত্তরাধিকার পান।
১০. মাতা:
বলা বাহুল্য, মৃতের পিতা জীবিত থাকতে মাতা উত্তরাধিকার পায় না। মাতা অসতী হলে সে উত্তরাধিকার লাভের ক্ষমতা হারায়। তবে দ্বিতীয় বিবাহ করে থাকলে সে উত্তরাধিকার হারায় না। বিমাতার কোন উত্তরাধিকার নাই।
১১. ভ্রাতা অর্থাত্ ভাই :
জীমূতবাহন বলেন ভ্রাতার স্থান মাতার নিম্নে কিন্তু ভ্রাতুস্পুত্রের উপরে। ভ্রাতাদের মধ্যে সহোদর ভ্রাতারাই প্রথমে উত্তরাধিকার পায় এবং তাদের অবর্তমানে বৈমাত্রেয় (যেখানে মাতা দুইজন কিন্তু পিতা একজন) ভ্রাতারা পায়। এ কারণে সহোদর ভ্রাতারা পিতা ও মাতার দিকে পিন্ড দিতে পারে কিন্তু বৈমাত্রেয় ভাইয়েরা পিতৃকূলে পিন্ড দিতে পারে।
১২. ভ্রাতুষ্পুত্র প্রথমে সহোদর পরে বৈমাত্রেয় :
ভ্রাতুষ্পুত্রের অবর্তমানে তার পুত্র পিন্ড দেবার অধিকারী বিধায় সেও উত্তরাধিকার পায়।
১৩. ভ্রাতুষ্পুত্রের পুত্র অর্থাত্ ভাইয়ের পুত্রের পুত্র:
১৪. ভাগিনেয় অর্থাত্ ভগ্নির পুত্র
১৫. পিতামহ অর্থাত্ পিতার পিতা
১৬. পিতামহী অর্থাত্ পিতার মাতা
- রাম তার ১ পুত্র এবং সহোদর ভাই রেখে মারা গেল। তালিকা অনুযায়ী রামের পুত্র রামের সমস্ত সম্পত্তি পাবে। কারণ পুত্রের স্থান তালিকাতে ১নং আর ভ্রাতা অর্থাত্ ভাইয়ের স্থান ১১ নম্বরে। উপরে উত্তরাধিকারী পাওয়া গেলে নীচের কেউ উত্তরাধিকারী হবে না।
- বলাই তার ১ স্ত্রী এবং দুই পুত্র রেখে মারা গেল। এক্ষেত্রে বলাইর ত্যাজ্য বিত্ত সমান তিন অংশে ভাগ হবে ৷ বিধবা স্ত্রী পাবে এবং বাকী অংশ দুই পুত্র তুল্যাংশে পাবে। ১৯৩৭ সনের সম্পত্তিতে হিন্দু নারীর অধিকার সংক্রান্ত আইন বলে বলাইর স্ত্রী এক ছেলের সমান অংশ পাবে। প্রকাশ থাকে যে, বলাইর বিধবার জীবনস্বত্বে হবে এবং এবং তার মৃত্যুর পর ঐ অংশ পুত্রদের উপর বতাবে ৷
- যদু তার দুই ভাই ও এক বোন রেখে মারা গেল। এখানে দুই ভাই তুল্যাংশে পাবে। দায়ভাগ মতে বোন সপিন্ড নয়। যে ৫ জন মহিলা উত্তরাধিকারিত্বের দাবিদার তাদের মধ্যে বোনের নাম নাই সুতরাং বোন সম্পত্তি পাবে না।
- কৃষাণ তার ৪ কন্যা এবং মাতা রেখে মারা গেল। কন্যাদের মধ্যে একজন অবিবাহিতা, একজন বিবাহিতা এবং পুত্রবতী, একজন বন্ধ্যা, এবং অপর জন বিধবা এবং তার দুই কন্যা সন্তান আছে। এইক্ষেত্রে অবিবাহিতা কন্যার দাবি সর্বাগ্রে, সুতরাং অবিবাহিতা কন্যা কৃষাণের সব সম্পত্তি জীবনস্বত্বে পাবে অন্যান্য কন্যাগণ কোন অংশ পাবে না। মাতা ও কিছু পাবে না। কারণ কন্যাদের ৫ নং এবং মাতার স্থান ৮ নং।
- ভাদু এক পুত্র, অপর মৃত পুত্রের দিকের দুই পৌত্র এবং অপর মৃত পুত্রের দিকের তিন প্রপৌত্র রেখে মারা গেল। ভাদু এ ক্ষেত্রে তালিকায় ১-৩ নং ব্যবস্থানুযায়ী ১/৩ ভাদুর পুত্র অংশ পাবে। তার দুই পৌত্র একত্রে অংশ পিছু নিয়মানুসারে এবং অপর তিন প্রপৌত্র একই নিয়মে অবশিষ্ট অংশ পাবে। পূর্বেই বলা হয়েছে এভাবে স্থলবতী নিয়মে অংশ পাওয়াকে বলা হয় অংশপিছু উত্তরাধিকারী।
- যদু মৃতা কন্যার এক দৌহিত্র, অপর মৃতা কন্যার দিকের দুই দোহিত্র এবং পিতাকে রেখে মারা গেল। এক্ষেত্রে পিতা কিছু পাবে না, কারণ পিতার স্থান সপিন্ডদের তালিকার ৯ নং আর দৌহিত্রের স্থান ৮ নং। তিন দৌহিত্র মাথাপিছু নিয়মে প্রত্যেকে সমান অংশ পাবে। অথাত্ ১/৩ অংশ পাবে। এ ক্ষেত্রে স্থলবতী মতবাদের অংশপিছু নিয়ম প্রযোজ্য হবে না। কারণ প্রতিনিধিত্ব মতবাদ শুধুমাত্র পুত্র, পৌত্র এবং প্রপৌত্র থাকলেই প্রযোজ্য হয়,অন্য কোন ক্ষেত্রে নয়।
- মধু ক ও খ দুই বিধবা এবং এবং বিধবা ক এর দিকে দুই পুত্র এবং অপর বিধবা খ এর দিকে তিন পুত্র রেখে মারা গেল। এই ক্ষেত্রে প্রত্যেক পুত্র অংশ পাবে এবং ১ঌ৩৭ সনের সম্পত্তিতে হিন্দুনারীর অধিকার সংক্রান্ত আইন বলে মধু দুই বিধবা অংশ পাবে এবং প্রয়োজনবোধে তারা পুত্রদের সাথে বন্টন দাবি করতে পারবে৷ মধুর বিধবাদের জীবনস্বত্ব হবে। এক বিধবা মারা গেলে তার অংশ উত্তরাজীবি সুত্রে অপর বিধবা পাবে এবং পরে সেও মারা গেলে উভয় বিধবার অংশ মধুর পাঁচ পুত্র সমান অংশে পাবে৷ উত্তরাধিকারীদের ক্রমানুসারি তালিকার বর্ণনায় দৃষ্টি দেয়া হলে পিতামহী অর্থাত্ ১৬ নম্বর পযন্ত বলা হয়েছে। পরবর্তী ক্রম নিম্নরুপ:
১৭। পিতৃব্য অর্থাত্ পিতার ভাই
১৮। পিতৃব্য পুত্র অর্থাত্ চাচার পুত্র
১ঌ। পিতৃব্যের পৌত্র অর্থাত্ চাচার নাতি
২০। পিসীর পুত্র অর্থাত্ ফুফুর পুত্র
২১। প্রপিতামহ অর্থাত্ দাদার পিতা
২২। প্রপিতামহী অর্থাত্ দাদার মাতা
২৩। পিতৃব্যের পিতা অর্থাত্ চাচার পিতা
২৪। পিতৃব্যের পিতার পুত্র অর্থাত্ চাচার পিতার পুত্র
২৫। পিতৃব্যের পৌত্র অর্থাত্ চাচার নাতি
২৬ । পিতামহের ভাগিনেয় অর্থাত্ দাদার বোনের ছেলে
২৭। পুতনির পুত্র অর্থাত্ পুত্রের কন্যার পুত্র
২৮। ভাইঝির পুত্র
২ঌ। ভাইপোর কন্যা
৩০। পিতৃব্যের কন্যার পুত্র -চাচার কন্যার পুত্র
৩১৷ পিতৃব্যের পিতার কন্যার পুত্র-চাচার পিতার কন্যার পুত্র
৩২৷ পিতৃব্যের পিতার পুত্রের কন্যার পুত্র-চাচার পুত্রের কন্যার পুত্র
৩৩৷ মাতামহ - নানা
৩৪। মামা
৩৫। মামার পুত্র
৩৬। মামার পৌত্র অর্থাত্ মামার নাতি
৩৭। মাসীর পুত্র অর্থাত্ খালার পুত্র
৩৮। প্রমাতামহ অর্থাত্ নানার পিতা
৩ঌ। প্রমাতামহের পুত্র অর্থাত্ নানার পিতার পুত্র
৪০। প্রমাতামহের পৌত্র অর্থাত্ নানার পিতার নাতি
৪১। প্রমাতামহের প্রপৌত্র অর্থাত্ নানার পিতার নাতির পুত্র
৪২। প্রমাতামহের কন্যার পুত্র অর্থাত্ নানার পিতার কন্যার পুত্র
৪৩। প্রমাতামহের পিতা অর্থাত্ নানার পিতার পিতা
৪৪৷ তার পুত্র
৪৫। তার নাতি
৪৬। তার নাতির পুত্র
৪৭। তার পুত্রের কন্যা
৪৮। মাতামহের পুত্রের কন্যার পুত্র অর্থাত্ মাতার পিতার পুত্রের কন্যার পুত্র
৪ঌ৷ উহার পৌত্রের কন্যার পুত্র অর্থাত্ তার পুত্রের পুত্রের কন্যার পুত্র
৫০। প্রমাতামহের পুত্রের কন্যার পুত্র অর্থাত্ মাতার পিতার পিতার পুত্রের কন্যার পুত্র
৫১। উহার পৌত্রের কন্যার পুত্র অর্থাত্ তাহার পুত্রের পুত্রের কন্যার পুত্র
৫২। প্র প্রমাতামহের পুত্রের কন্যার পুত্র অর্থাত্ মাতার পিতার পিতার পুত্রের কন্যার পুত্র
৫৩। উহার পৌত্রের কন্যার পুত্র অর্থাত্ তার পুত্রের পুত্রের কন্যার পুত্র
সম্পত্তি হস্তান্তর আইন
সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৮৮২ (১৮৮২ সালের ৪নং আইন) সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সম্পত্তি হস্তান্তর কার্যক্রম সম্পর্কিত আইনের কোনো কোনো অংশের ব্যাখ্যা ও সংশোধনের উদ্দেশ্যে প্রণীত। এটি কোন সমন্বিত আইন নয় অথবা এটি সম্পত্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে সকল নিয়মকানুন বিষয়ক দলিলের তাৎপর্যও বহন করে না। এ আইনে কেবল স্বেচ্ছায় একজন জীবিত ব্যক্তি অপর জীবিত ব্যক্তির নিকট স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারে। আইনটি ব্রিটেনের স্থাবর সম্পত্তি আইনের ভিত্তিতে প্রণীত এবং এটির বহু ধারা ইতোপূর্বে নাকচ ও রহিতকৃত বিভিন্ন আইন থেকে গৃহীত হয়েছে।
জীবিত ব্যক্তিদের মধ্যে সম্পত্তি হস্তান্তরে আইনটি প্রযোজ্য হলেও ১৯২৫ সালের একটি সংশোধনীর মাধ্যমে ‘জীবিত ব্যক্তি’ কথাটির চৌহদ্দি বাড়ানো হয়, যাতে রয়েছে কোনো কোম্পানি বা কোনো সমিতির মতো কল্পিত বা বৈধ কোনো ব্যক্তি। এতে আছে বর্তমান তথা ভবিষ্যতের লেনদেন ও হস্তান্তর। এ আইনে ‘সম্পত্তি’ সামগ্রিক অর্থে ব্যবহূত, যাতে শুধু ভৌত বস্ত্তই নয়, এগুলির অন্তর্গত স্বার্থও বোঝায়। এতে আছে দায়মোচন সংক্রান্ত ন্যায়বিচার লাভের অধিকার ও জামানতসহ ঋণ। মামলাযোগ্য দাবিগুলোও এই শ্রেণীর সম্পত্তি।
সম্পত্তি হস্তান্তর আইন বিক্রয়, বন্ধক, দান, বিনিময় ও ইজারা ধরনের কয়েক প্রকার হস্তান্তরের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টভাবে ব্যবহূত হয়। একশত বা তদূর্ধ্ব টাকার স্থাবর সম্পত্তির বিক্রয় অবশ্যই নিবন্ধীকরণ দলিলে সম্পন্ন হতে হবে। একশত টাকার কম মূল্যের স্থাবর সম্পত্তি নিবন্ধীকরণ দলিল বা সাধারণ দখলদানের মাধ্যমে সম্পন্ন হতে পারে। এক্ষেত্রে ক্রেতা ও বিক্রেতার অধিকার ও বাধ্যবাধকতা এ আইনের ৫৫ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে। এ আইনে বন্ধক হলো ঋণ হিসেবে অগ্রিম প্রদত্ত বা প্রদেয় অর্থ অথবা কোনো বর্তমান বা ভবিষ্যৎ দেনা পরিশোধ বা আর্থিক দায় সৃষ্টি করতে পারে এরূপ কোনো কার্যসম্পাদনের নিশ্চয়তা বিধানের উদ্দেশ্যে কোনো নির্দিষ্ট স্থাবর সম্পত্তির স্বত্ব হস্তান্তর। এ আইনে ৬ ধরনের বন্ধকের উল্লেখ করা হয়েছে; যেমন (১) অমিশ্র বন্ধক, (২) শর্তাধীন বিক্রয়ে বন্ধক, (৩) খায়খালাসি বন্ধক, (৪) ইংলিশ বন্ধক, (৫) দলিল জমা দেওয়া বন্ধক ও (৬) শ্রেণীহীন বন্ধক। সকল বন্ধকের ক্ষেত্রে গচ্ছিত টাকা একশত বা ততোধিক হলে ‘দলিল জমা দেওয়া বন্ধক’ ছাড়া অন্যান্য যাবতীয় বন্ধকের ক্ষেত্রে অন্তত দুজন সাক্ষিসহ নিবন্ধীকরণ আবশ্যক।
সম্পত্তি হস্তান্তর আইন একটি সাধারণ আইন, যা বিভিন্ন ধরনের স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর ও মামলাযোগ্য দাবির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এ আইন সংক্রান্ত যেকোন বিরোধ দেওয়ানি আদালতের এখতিয়ারভুক্ত। এ বিষয়ে পৃথক আইন চালু না হওয়া পর্যন্ত যেখানে কৃষিজমি হস্তান্তর বাংলার প্রজাস্বত্বব আইন (বর্তমানে পূর্ব-বাংলা জমিদারি অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ত্ব আইন) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতো সেখানে অকৃষিজমি এবং বসতবাড়ি ও গৃহসংলগ্ন জায়গা উভয়ের হস্তান্তর সম্পত্তি হস্তান্তর আইনের আওতাভুক্ত ছিল। এসব পৃথক ও বিশেষ সংবিধি হলো: (ক) অকৃষি প্রজাস্বত্ব আইন ১৯৪৯ এবং (খ) বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১। শেষোক্ত আইনটি ১৯৪২ সালের ‘বাংলার বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ আদেশ’ থেকে উদ্ভূত। পৌর এলাকার বাড়িভাড়া সম্পর্কিত বিরোধ, ভাড়াটিয়া কর্তৃক ভাড়া পরিশোধ, ভাড়া বাড়ি মেরামত বিষয়ে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণ ১৯৯১ আইনে নিয়োগকৃত কন্ট্রোলারের (বাড়িভাড়া) নিকট অভিযোগ দায়ের করতে হয় এবং তিনিই তা নিষ্পত্তি করেন। [আমিনুল হক]
আদিবাসী সমাজে প্রচলিত উত্তরাধিকার আইন
১.গারো-
গারো সমাজ প্রধানত মাতৃসূত্রীয় ধারায় মাতার বংশ মর্যাদা অনুসারে তাদের সন্তানেরাও পরিচিত হয়। স্বাভাবিকভাবে কন্যা মায়ের সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারী হিসাবে গন্য হয়,পুত্র নয়। বংশ পরম্পরায় তাহারা মাতৃসূত্রীয় রীতিতে একে অন্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত। মাতৃপ্রধান পরিবার প্রথা বিদ্যমান থাকায় পরিবারের সামগ্রিক ক্ষমতা ন্যস্ত থাকে স্ত্রীর হাতে। তাদের বংশধারায় সম্পত্তি প্রাপ্তি থেকে আরম্ভ করে সবকিছু মাতার কাছ হইতে মেয়েতে বতার্য়।পরিবারের সম্পত্তির মালিক স্ত্রী সাব্যস্ত হইলেও স্বামী উহার যাবতীয় ব্যবস্থাপনার কাজে নিয়োজিত থাকে।সঙ্গত কারণে যে কোন জরুরী ব্যাপারে গারো সমাজে স্বামী ও স্ত্রী উভয়েই যৌথভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। এদের সমাজ কাঠামোতে ছোট মেয়ে সর্বাপেক্ষা আদরণীয়া। পরিণত বয়সে তাহাকে সাধারণত আপন মামাতো ভাইয়ের সাথে বিবাহ দেওয়ার রীতি প্রচলিত।
২.ম্রো বা মুরং-
মুরং সমাজ পিতৃতান্ত্রিক। তাহাদের সমাজে মেয়েদের প্রাধান্যও রয়েছে।কাজেই যৌথ পরিবারই তাহাদের পারিবারিক রূপ বিশেষ। পিতার দিক থেকে ছেলেরাই সম্পত্তির মালিকানা ভোগ করে। তবে কনিষ্ঠ ছেলে সম্পত্তির অধের্ক মালিকানা পেয়ে থাকে।মুরং সমাজে প্রচলিত রীতি অনুযায়ী স্বামী কোনো সন্তান না রেখে মারা গেলে স্ত্রী তাহার যাবতীয় জিনিসপত্র ও অলংকারাদি নিয়া পিতৃগৃহে ফিরে আসে। ফলে মেয়ের পিতা ছেলের পিতাকে ঐসব জিনিসের মোট মূল্য ও যৌতুকের টাকা ফিরিয়ে দেয়।সন্তান থাকলে মেয়েরা মা-বাবার সংসারে আসতেও পারে; আবার নাও আসতে পারে।মা-বাবার সংসারে ফিরে না আসলে অর্থ ফিরিয়ে দেবার প্রশ্ন উঠে না।
৩.চাকমা-
চাকমা পরিবার পিতৃতান্ত্রিক। তাহাদের পারিবারিক ক্ষমতা স্বামীর হাতে বা বয়স্ক পুরুষের হাতে ন্যস্ত থাকে। পিতার বংশ পরিচয়ে ছেলে-মেয়েদের পরিচয় এবং সম্পত্তির উত্তরাধিকারিত্ব নিণীর্ত হয়। বিয়ের পরে নারী স্বামীর গোষ্ঠীর অন্তভূর্ক্ত হয়ে যায়। চাকমা সমাজে পিতার মৃত্যুর পর পুত্র সন্তানেরা সম্পত্তিতে সমান অংশে মালিকানা পেয়ে থাকে। কিন্তু কন্যা সন্তানেরা পিতার সম্পত্তির কোন অংশ পায় না।তবে তাহারা মেয়েদেরকে কোন অবহেলা করে না; পুত্র সন্তান না থাকিলে সেই ক্ষেত্রে মেয়েরা পিতার সম্পত্তির মালিকানা পেয়ে থাকে। চাকমা সমাজে বহু বিবাহ ও বিধবা বিবাহ সম্পাদন অনুমোদিত রয়েছে। তবে একজন স্বামী মোট কয়টি মহিলাকে বিয়ে করতে পারবে তাহার কোন সংখ্যা উল্লেখ নাই। প্যারালাল কাজিন বিয়েও সীমিত অর্থে প্রচলিত রয়েছে ঠিক,তবে আপন চাচাতো ভাই- বোনের মধ্যে বিয়ে স্থাপনে সামাজিকভাবে বাধা নিষেধ রয়েছে।
৪. চাক-
চাক সমাজব্যবস্থা পিতৃতান্ত্রিক। পরিবারের কতৃর্ত্ব পিতার এবং সন্তান জন্মের পর পিতার গোত্রের অন্তভূর্ক্ত হয়ে সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়। উত্তরাধিকারীত্ব প্রসঙ্গে সন্তান হওয়ার পর মেয়েরা আনুষ্ঠানিকভাবে বাবার বাড়ীতে যায়। এই সময় সে বাবা-মার কাছে তাহার সম্পত্তির অংশ পাওয়ার দাবি জানায়। তখন সামাজিক রীতি অনুযায়ী বাবা-মা তাকে তার ন্যায্য অংশ দিয়ে থাকে। সম্পত্তির অংশ হিসাবে সে টাকা-পয়সা, গরু-মহিষ,অলংকার প্রভৃতি পায়। তবে জায়গা-জমির কোন ভাগ উত্তরাধিকার সূত্রে মেয়ে কখনো পায় না। জীবিত থাকা অবস্থায় বাবা-মা মেয়েকে ইচ্ছা করলে জমির ভাগ দিতে পারে।
৫.লুসাই-
লুসাইদের সমাজব্যবস্থা পিতৃতান্ত্রিক। এইজন্য পিতার উত্তরাধিকার সূত্রে ছেলেরা সম্পত্তির মালিক হয়ে থাকে। কিন্তু লুসাইদের মধ্যে একটি নিয়ম প্রচলিত রয়েছে যে, সকলের ছোট ছেলেই সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হয়। বড় ভাইয়েরা সাধারণত ছোট ভাইয়ের কৃপার পাত্র হয়ে দাঁড়ায়। কেউ যদি অপুত্রক থাকে তখন নিদির্ষ্ট দিনে 'সাফুম' উত্সব পালন করে সম্পত্তির মালিকানার বিষয়টি নিকটস্থ কোন আত্মীয়ের হাতে সমপর্ণ করে থাকে। বিধবা মায়ের ছেলেরা তাদের মায়ের দ্বিতীয় বিয়ে হওয়ার পর সম্পত্তির মালিক হওয়ার অধিকার পায়।
৬. মারমা-
মার্মা সমাজে পিতৃতান্ত্রিক পরিবার প্রথা প্রচলিত থাকায় সন্তান-সন্ততির পরিচিতি, সম্পত্তির মালিকানা এবং উত্তরাধিকার প্রথা পিতার দিক থেকে নিণীর্ত হয়। উত্তরাধিকারসূত্রে বড় ছেলে সম্পত্তির মালিকানা পেয়ে থাকলেও পিতা ইচ্ছা করলে ছেলেদের মধ্যে সম্পত্তি ভাগ বাটোয়ারা করে দিতে পারেন। এতে বড় ছেলে পায় সম্পত্তির অধের্ক, মেজো ছেলে সিকি ভাগ বা এক চতুর্থাংশ এবং অবশিষ্ট সম্পত্তি অন্য ছেলেদের মধ্যে বন্টন করা হয়। কিন্তু ছেলে সন্তান না থাকলে সেই ক্ষেত্রে মেয়েরাই সম্পত্তির মালিকানা ভাগ করে নেয়।
টিপরা বা ত্রিপুরা সমাজ পিতৃতান্ত্রিক।পরিবারে পিতার স্থান উর্ধে হওয়ায় সাবির্ক বিষয়াদিতে তিনি খুব ক্ষমতাবান হয়ে থাকে। পিতা থেকে তাহাদের গোষ্ঠী বা গোত্রের উত্পত্তি এদের সমাজব্যবস্থায় মেয়ে ও স্ত্রীদের তেমনকোন আধিপত্য নেই। পরিবার পরিচালনা পদ্ধতিতে কতৃর্ত্বের ব্যাপারে পিতার পরবতীর্তে মাতার স্থান। অতপর জেষ্ঠ্যপুত্রের স্থান হয়ে থাকে। এই পদ্ধতিতে একজন পুত্র তাহার পিতার দফা ও গোষ্ঠীর অধিকারী হয়। আর কন্যা তাহার মাতার দফা ও গোষ্ঠীর অধিকারী সাব্যস্ত হয়ে থাকে। তাহাদের উত্তরাধিকারিত্ব প্রসঙ্গে মহেন্দ্র লাল ত্রিপুরা লিখিয়াছেন যে,"যে গোত্র ছেলেরা পিতার বংশ এবং মেয়েরা মাতার বংশ অনুসরণ করে; ইহাতে ছেলেরা পায় পিতার সম্পত্তি, মেয়েরা পায় মাতার সম্পত্তি"।
৮.তঞ্চংঙ্গ্যা-
তঞ্চংঙ্গ্যা সমাজ পিতৃতান্ত্রিক। তঞ্চংঙ্গ্যা সমাজে সম্পত্তির উত্তরাধিকার নিম্নরূপ:
ক. পিতার মৃত্যুর পর পুত্র সন্তানেরা উত্তরাধিকারসূত্রে সম্পত্তির সমান অংশ পায়।এখানে সম্পত্তি বলতে জমিজমা, গৃহের আসবাবপত্র, গরু-মহিষ ইত্যাদিকে বুঝায়।
খ. কন্যা সন্তানেরা পৈতৃক সম্পত্তির মালিকানা দাবী করিতে পারে না।তবে পিতার যদি কোন পুত্র সন্তান না থাকে কেবল সেক্ষেত্রেই কন্যা সন্তানেরা পৈত্রিক সম্পত্তির মালিকানা দাবী করতে পারে।
গ.মৃত ব্যক্তির একাধিক স্ত্রী থাকলে তাদের পুত্র সন্তানেরা সম্পত্তির সমান অংশ পায়।
ঘ.মৃত ব্যক্তির ঔরসজাত কোন পুত্র বা কন্যা সন্তান না থাকলে যদি তার পালিত পুত্র থাকে সেক্ষেত্রে সেই পালিত পুত্রই সম্পত্তির উত্তরাধিকারী বলে বিবেচিত হয়। তবে তাকে অবশ্যই মৃত ব্যক্তির স্ত্রীর ভরনপোষণ করতে হয়; অন্যথায় মৃত ব্যক্তির বিধবা স্ত্রী সম্পত্তির সমান একাংশ পায়।
ঙ. উম্মাদ অথবা সংসারত্যাগী অথবা পিতার জীবিতাবস্থায় পৃথকান্নভূক্ত সন্তানেরা পিতার মৃত্যুর পর সম্পত্তির সমান অংশ পায়।
চ. অবৈধ সন্তানেরা সম্পত্তির অংশীদার হতে পারে না । তবে তারা যে ব্যক্তির ঔরসজাত সেই ব্যক্তির মৃত্যুর পর উহার সম্পত্তির অংশ পেতে পারে।
ছ.পিতার মৃত্যুর পূর্বে যদি কোন পুত্রের মৃত্যু হয় এবং সেই পুত্রের ঔরসজাত পুত্র সন্তানাদি থাকে সেক্ষেত্রে পিতামহের মৃত্যুর পর দৌহিত্র সূত্রে তারা সম্পত্তির অংশ পায়।
জ. যদি কোন বিধবা অথবা তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীলোকের পুত্র সন্তান থাকে এবং সে অবস্থায় যদি সে দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ করে, সেই পুত্র সন্তানেরা তাদের মায়ের দ্বিতীয় স্বামীর তত্ত্বাবধানে থাকলেও তারা(পুত্র সন্তানেরা) মায়ের পূর্ব স্বামীর মৃত্যুর পর সম্পত্তির অংশ থকে বঞ্চিত হয় না।
ঝ. যদি কোন ব্যক্তি জীবিত অবস্থায় তাঁর সম্পত্তির কোন অংশ অন্য কাকেও দানপত্র করে দিয়ে যায় তত্ক্ষেত্রে দাতার মৃত্যুর আগে বা পরে দান গ্রহীতা ব্যক্তি সম্পত্তির মালিক হতে পারে।
৯.রাখাইন-
রাখাইন সমাজ পিতৃতান্ত্রিক।পিতাই পরিবারের প্রধান বলিয়া পুরুষেরা পরিবারে কতৃর্ত্ব দেয়। মেয়েদেরকে তারা অবহেলা করে না; তাই তাদের মধ্যে মেয়েদের অধিকার পুরুষদের সমান। অর্থাত্ কোনও পরিবারে বাবা কিংবা মা মারা গেলে তখন পুত্র ও কন্যারা সমান হারে সম্পত্তির অংশ ভাগ করে নেয়।
১০.খাসিয়া-
খাসিয়া পরিবার মাতৃপ্রধান। ফলে পরিবারে মেয়েদের কতৃর্ত্ব ও প্রভাব যথেষ্ট। সন্তান-সন্ততিদের পরিচিতি, বংশ মর্যাদা ও উত্তরাধিকারিত্ব প্রথা মায়ের গোত্রের দিক থেকে নিণীর্ত হয়। তাই মেয়েরা সম্পত্তির মালিকানা পেয়ে থাকে। ভাতিজীকে বিয়ে করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।মামার জীবিত অবস্থায় মামার মেয়েকে বিয়ে করা চলে না। কিন্তু মামার মৃত্যুর পরে মামার মেয়েকে বিয়ে করতে আর কোন বাধা থাকে না ।মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় স্ত্রীর গৃহে স্বামীকে বসবাস করিবার রীতি থাকিলেও অবশেষে সন্তান-সন্ততি হওয়ার পর স্বামী স্ত্রীকে নিয়া নিজের বাড়ীতে চলে যেতে পারে।যেহেতু খাসিয়াদের সমাজ ব্যবস্থা মাতৃতান্ত্রিক,সেহেতু মহিলারা উত্তরাধিকার সূত্রে প্রচুর গহনা পাওয়ার সুযোগ পেয়ে থাকে। যখন কোন পুরুষ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু অজর্ন করতে পারে তখন কেবল তাতে তার মালিকানা সাব্যস্ত হয়, নতুবা পুরুষ উত্তরাধিকার সূত্রে কোন কিছুর মালিকানা পায় না।
১১.মণিপুরী-
মণিপুরীদের পারিবারিক জীবনযাত্রা পিতৃতান্ত্রিক। তাহাদের সমাজ কাঠামোতে পিতাই পরিবারের সবের্সর্বা কর্তা হিসাবে গণ্য হয়। সন্তান-সন্ততির পরিচয়ও পিতার সূত্র ধরিয়া উত্তরাধিকারীত্ব নিণীর্ত হয়। এদের পারিবারিক অবস্থায় ছেলেরা পিতার সম্পত্তির অংশ সমানভাবে পায়; মেয়েরা পিতার সম্পত্তিতে কোনরূপ অধিকার পায় না।পিতা ইচ্ছা করিলে সম্পত্তির কিছু অংশ মেয়েকে দান স্বরূপ দিতে পারেন। কোনও ছেলে না থাকলে সেই ক্ষেত্রে মেয়েরা উক্ত সম্পত্তিতে সম্পূর্ণ অধিকারিণী হয়ে থাকে। যাদের পিতা মারা গেছে তাদের বেলায় বয়োজ্যোষ্ঠ ব্যক্তিটিই ঐ পরিবারের কর্তা বিবেচিত হয়। নিঃসন্তান কোন দম্পতিদের মধ্যে স্বামী আগে মারা গেলে সেই ক্ষেত্রে বিধবা স্ত্রীই স্বামীর সম্পত্তি জীবনস্বত্বে পুরোটা ভোগ করে থাকে যতদিন বেঁচে থাকে ততদিন পর্যন্ত; কিন্তু করবার কোন অধিকার পায় না। অতঃপর বিধবা স্ত্রী মারা গেলে তখন ঐ সম্পত্তি উক্ত মৃত ব্যক্তির ভাইয়েরা পেয়ে থাকে।
১২.কুকি-
কুকিদের সমাজব্যবস্থা পিতৃতান্ত্রিক।তাই পিতাই তাহাদের পরিবারের কর্তা হিসাবে গণ্য হয়। আর পিতার অবতর্মানে বয়োজ্যোষ্ঠ ব্যক্তি অভিভাবক বলিয়া বিবেচিত হয়ে থাকে। তবে এই ব্যাপারে একটু ভিন্নতর রীতি চালু রয়েছে যে, পিতৃপুত্রদের মধ্যে সকলের বড় ও ছোট ছেলেই সম্পত্তির স্বত্বাধিকারীত্ব পায়; কিন্তু অন্যান্য ভাইগুলি তাহাদের করুণার পাত্র হিসাবে থাকা ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকে না।
১৩.লাউয়া-
লাউয়ারা পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার ধারক। পিতার মৃত্যুর পর তার সকল সম্পত্তির মালিক ছেলেরাই হইত। তখন মা ও মেয়েরা কোন অংশ পাইত না; ছেলের অবতর্মানে পিতার ভাইয়েরা অধিকারী হত। বতর্মানে উত্তরাধিকারীত্বে অনেক পরিবতর্ন এসেছে। কাজেই এখন ছেলে, মেয়ে ও মা সকলেই সম্পত্তির অংশ পায় আনুপাতিক হারে ইসলামী শরীয়তি বিধান মোতাবেক। সাধারণত পিতার মৃত্যুর পর সম্পত্তির মধ্যে বড় ছেলে ঘর বা ডেরা বা নৌকার অধিকারী হয়।তদসঙ্গে তাহাকে নাবালক ও অবিবাহিত ভাইবোনদের দেখাশোনার দায়িত্বও নিতে হয়।বড় ছেলের উপর অনেক সময় পিতার মৃত্যুর পরবতীর্তে বিধবা মাকে পালন করাসহ সংসারের সাবির্ক দায়িত্ব অপির্ত হয়। কোন ব্যক্তির ছেলেমেয়ে না থাকিলে তাহার মৃত্যুর পর সম্পত্তির মালিক হইবে তাহার ভাই এবং ভাইয়ের ছেলেরা।সম্পত্তির মধ্যে ইসলামের বিধান অনুযায়ী মাতা,ছেলেমেয়ে সকলের অধিকার রয়েছে এতদহারে যে, বাবার মৃত্যুর পর মাতা দুই আনা এবং ছেলেরা মেয়েদের দ্বিগুন অনুপাতে পিতার সম্পত্তি বন্টন করে নেয়। বিয়ের পূর্বের শতার্নুযায়ী অনেক সময় পিতার মৃত্যুর পর তার সম্পত্তির মধ্যে মাতা ও ছেলেমেয়েদের মাঝে সমান অংশে বন্টিত হওয়ার অধিকার থাকে।
১৪.খুমি
খুমী সমাজ পিতৃতান্ত্রিক। পিতা হইলেন পরিবারের প্রধান।পিতার মৃত্যুর পর বড় ছেলে সকল সম্পত্তির মালিক বিবেচিত হয়। ইহা তাহাদের সামাজিক চিরাচরিত রীতি। খুমী সমাজে সমগোত্র বিবাহ সম্পাদন সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।খুমি সমাজে বুই বা অনুগত দাস প্রথা আছে।সাধারণত প্রধান বা বড়লোকদের বাড়িতেই এই ধরণের বুই আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে।তারা প্রধানদের হুকুমে জীবন পর্যন্ত বিসর্জন দিতে কুন্ঠিত হয় না। আবার কোনও প্রধান যদি অপুত্রক হয়,তবে মৃত্যুর আগে তাহার সমস্ত সম্পত্তি বুইকে প্রদান করে থাকে।
১৫.হাজং
হাজংরা পিতৃতান্ত্রিক সমাজভূক্ত জাতি।হাজংরা মাতৃপ্রধান সমাজের অন্তভূর্ক্ত নয় বলে স্থাবর-অস্থাবর সমস্ত সম্পত্তিই ছেলেরা সমান হারে পায়।মেয়েদের সম্পত্তিতে কোন ধরণের অধিকার নাই বলিলে চলে,তবে বিয়ের সময় মেয়েদেরকে অনেক কিছু ঐচ্ছিক যৌতুকসরূপ দিতে হয়।
১৬.সাঁওতাল
সাঁওতাল সমাজে পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রচলিত। পিতার মাধ্যমেই সন্তানের পরিচিতি ও উত্তরাধিকারীত্ব নিণীর্ত হয়। এই সমাজে মায়ের চাইতে পিতার কতৃর্ত্ব অধিক হওয়ায় পুরুষেরাই সবর্তোভাবে সমাজের কতৃর্ত্ব গ্রহণ করিয়া থাকে। সাঁওতালদের সমাজে পিতার সম্পত্তিতে পুত্রদের সমান উত্তরাধিকার থাকে কিন্তু ঐ সম্পত্তিতে কন্যাদের কোন অধিকার নাই।সঙ্গত কারণে বিয়ের পরবতীর্তে স্বামীর সম্পত্তির উপর তাহাদেরকে নির্ভর করিতে হয়। তবে সম্পত্তি বন্টনের সময় পিতা কন্যাকে একটি করে গাভী প্রদান করে।কোনও পুত্রহীন ব্যক্তির সম্পত্তি তাহার সহোদর ভাইয়েরা পেয়ে থাকে।
১৭.মুন্ডা
মুন্ডা সমাজে উত্তরাধিকারীত্ব নিণীর্ত হয় পুরুষ বংশানুক্রমে।তাদের সমাজ রীতি অনুসারে পিতার মৃত্যুর পর শুধু ছেলেরাই সমস্ত সম্পত্তির অধিকারী হয়। মেয়েরা কিছুই পায় না। কখনও কখনও মৃত্যুর পূর্বে পিতা ইচ্ছা করে মেয়ে-জামাইকে কিছু দান স্বরুপ প্রদান করলে মেয়ে এবং জামাই উক্ত সম্পত্তির অধিকারী হয়। বাবার সমস্ত সম্পত্তি পুত্রদের মধ্যে সমান হারে বন্টন করা হয়।তবে ঘরের অধিকারী সাধারণত কনিষ্ঠ পুত্রই হইয়া থাকে। আবার পুত্রহীন ব্যক্তির সম্পত্তির অধিকার তাহার ভাইদের উপর বর্তায়।
তো এই ছিলো উত্তরাধিকার আইন । আইন জানুন , আইন মানুন। একটা কথা মনে রাখবেন , প্রত্যেক মানুষকেই একদিন তার কৃতকর্মের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।