৪০তম বিসিএস প্রিলিমিনারী পরীক্ষার বাংলা অংশের প্রশ্ন সমাধান (ব্যাখ্যা সহ)
আসসালামু ওয়ালাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
সবাই কেমন আছেন ? আশা করি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছেন।
বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে বিগত সালের পরীক্ষার প্রশ্নের সমাধান প্র্যাকটিস করা খুবই গুরুত্বপুর্ন । কারন এতে প্রশ্ন কাঠামো সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায় এবং পরীক্ষার ভয় ভীতিও কিছুটা দূর হয়। আপনারা বিসিএস প্রশ্নের সমাধান পেতে গুগলে প্রায়ই সার্চ করে থাকেন । তাই আজ আমি আপনাদের জন্য নিয়ে এলাম ৪০তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার বাংলা অংশের সবগুলো প্রশ্নের ব্যাখ্যাসহ উত্তর ।
তো আর কথা বাড়াবো না, সরাসরি ৪০তম বিসিএস প্রশ্ন সমাধান-এ চলে যাই।
০১. বাক্যের ক্রিয়ায় সাথে অন্যান্য পদের যে সম্পর্ক তাকে কী বলে?
(ক) বিভক্তি (খ) কারক (গ) প্রত্যয় (ঘ) অনুসর্গ
উত্তর: (খ) কারক
ব্যাখ্যা: কৃ + নক = কারক। বাক্যের ক্রিয়ার সাথে অন্যান্য পদের যে সম্পর্ক তাকে কারক বলে।
০২. ‘গীর্জা’ কোন ভাষার অন্তর্গত শব্দ?
(ক) ফারসী (খ) পর্তুগীজ (গ) ওলন্দাজ (ঘ) পাঞ্জাবী
উত্তর: (খ) পর্তুগীজ
ব্যাখ্যা: পর্তুগিজ শব্দ- গীর্জা, পাদ্রী, বোবা, কেরানী, মিস্ত্রি, কামড়া, জানালা, আয়া, আলাপ, আচাড়, ইংরেজ, পিস্তল, তোয়ালে, গুদাম, চাবি, আলমিরা, গামলা, বালতি, আনারস, পেপে, পেয়ারা, তামাক, আলপিন, খোঁচা, নোনা।
০৩. কোন শব্দযুগল বিপরীতা্র্থক নয়?
(ক) ঐচ্ছিক-অনাবশ্যক (খ) কুটিল-সরল (গ) কম-বেশী (ঘ) কদাচার-সদাচার
উত্তর: (ক) ঐচ্ছিক-অনাবশ্যক
ব্যাখ্যা: ঐচ্চিক-অনাবশ্যিক (সমার্থক শব্দ)।
০৪. দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক-বাংলা ব্যাকরণ অনুযায়ী কোন বিভক্তি?
(ক) তৃতীয়া বিভক্তি (খ) প্রথমা বিভক্তি (গ) দ্বিতীয়া বিভক্তি (ঘ) শূন্য বিভক্তি
উত্তর: (ক) তৃতীয়া বিভক্তি
০৫. ‘অভিরাম’ শব্দের অর্থ কী?
(ক) বিরামহীন (খ) বালিশ (গ) চলন (ঘ) সুন্দর
উত্তর: (ঘ) সুন্দর
ব্যাখ্যা: অভিরাম- [বিশেষণ পদ] সুন্দর, আনন্দদায়ক। [অভি+রম্+অ]। অভিরাম (adjective) Beautiful; pretty; handsome; pleasing.
০৬. শরতের শিশির-বাগধারা শব্দটির অর্থ কী?
(ক) সুসময়ের বন্ধু (খ) সুসময়ের সঞ্চয় (গ) শরতের শোভা (ঘ) শরতের শিউলি ফুল
উত্তর: (ক) সুসময়ের বন্ধু
ব্যাখ্যা: “শরতের শিশির” বাগধারাটির অর্থ সুসময়ের বন্ধু, ক্ষণস্থায়ী। সুসময়ের বন্ধুরা সাধারণত ক্ষণস্থায়ী হয়ে থাকে দুধের মাছি বাগধারার অর্থও সুসময়ের বন্ধু।
০৭. শিব রাত্রির সলতে-বাগধারাটির অর্থ কী?
(ক) শিবরাত্রির আলো (খ) একমাত্র সঞ্চয় (গ) একমাত্র সন্তান (ঘ) শিবরাত্রির গুরুত্ব
উত্তর: (গ) একমাত্র সন্তান
ব্যাখ্যা: শিব রাত্রির সলতে বলতে বুঝায় পিতা মাতার এক মাত্র জীবিত সন্তান/এক মাত্র সন্তান/এক মাত্র অবলম্বন/একমাত্র বংশধর।
০৭. শিব রাত্রির সলতে-বাগধারাটির অর্থ কী?
(ক) শিবরাত্রির আলো (খ) একমাত্র সঞ্চয় (গ) একমাত্র সন্তান (ঘ) শিবরাত্রির গুরুত্ব
উত্তর: (গ) একমাত্র সন্তান
ব্যাখ্যা: শিব রাত্রির সলতে বলতে বুঝায় পিতা মাতার এক মাত্র জীবিত সন্তান/এক মাত্র সন্তান/এক মাত্র অবলম্বন/একমাত্র বংশধর।
০৮. “প্রোষিতভর্তৃকা”- শব্দটির অর্থ কী?
(ক) ভৎসনাপ্রাপ্ত তরুণী (খ) যে নারীর স্বামী বিদেশে অবস্থান করে (গ) ভূমিতে প্রােথিত তরুমূল (ঘ) যে বিবাহিতা নারী পিত্রালয়ে অবস্থান করে
উত্তর: (খ) যে নারীর স্বামী বিদেশে অবস্থান করে
ব্যাখ্যা: ভর্ৎসনাপ্রাপ্ত তরুণী/নারী- ভর্ৎসিতা; যে নারীর স্বামী বিদেশে অবস্থান করে- প্রোষিতভর্তৃকা; যে পুরুষের স্ত্রী বিদেশে থাকে- প্রোষিতপত্নীক/ প্রোষিতভার্য; বিবাহিতা/অবিবাহিতা নারী পিত্রালয়ে অবস্থান করে- চিরন্ট।
০৯. বাংলা কৃৎ-প্রত্যয় সাধিত শব্দ কোনটি?
(ক) কারক (খ) লিখিত (গ) বেদনা (ঘ) খেলনা
উত্তর: (ঘ) খেলনা
ব্যাখ্যা: কৃদন্ত পদ: কৃৎ প্রত্যয় সাধিত পদটিকে বলা হয় কৃদন্ত পদ। অর্থাৎ যে নাম পদ (বিশেষ্য বা বিশেষণ পদ) ক্রিয়ামূল বা ধাতুর সঙ্গে কৃৎ প্রত্যয় যোগ হয়ে গঠিত, তাকে কৃদন্ত পদ বলে। সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ক্রিয়ামূল বা ধাতু থেকে গঠিত বিশেষ্য বা বিশেষণ পদকেই কৃদন্ত পদ বলে। যেমন, উপরের পড়ুয়া, নাচুনে, জিতা। বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত কৃৎ প্রত্যয় ২ প্রকার- বাংলা কৃৎ প্রত্যয় ও সংস্কৃত কৃৎ প্রত্যয়। না (বাংলা কৃৎ প্রত্যয়): বিশেষ্য গঠনে ব্যবহৃত হয়। √কাঁদ+না = কাঁদনা ˃ কান্না √রাঁধ+না = রাঁধনা ˃ রান্না √ঝর+না = ঝরনা
১০. ‘Attested’-এর বাংলা পরিভাষা কোনটি?
(ক) সত্যায়িত (খ) প্রত্যয়িত (গ) সত্যায়ন (ঘ) সংলগ্ন/সংলাপ
উত্তর: (খ) প্রত্যয়িত
ব্যাখ্যা: Attested এর বহুল ব্যবহৃত বাংলা পারিভাষিক শব্দ হচ্ছে ‘সত্যায়িত’। সূত্র হিসেবে বাংলা একাডেমী English to Bengali dictionary উল্লেখ করা যেতে পারে। ড. শাহজান মনিরের বাংলা ব্যাকরণে attestation শব্দটির বাংলা দেয়া হয়েছে ‘সত্যায়ন’।
১১. কোনটি শুদ্ধ বানান?
(ক) প্রজ্বল (খ) প্রোজ্জল (গ) প্রোজ্বল (ঘ) প্রোজ্জ্বল
উত্তর: (ঘ) প্রোজ্জ্বল
ব্যাখ্যা: কিছূ শুদ্ধ বানান: বয়োজ্যেষ্ঠ বাল্মীকি বিদুষী বিভীষিকা বুদ্ধিজীবী বৈয়াকরণ পৈতৃক প্রণয়ন প্রতিযোগিতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রাণিবিদ্যা প্রোজ্জ্বল/প্রজ্জ্বলন ফটোস্ট্যাট বহিষ্কার, ব্যর্থ ব্যতীত।
১২. ‘জোছনা’ কোন শ্রেণীর শব্দ?
(ক) যৌগিক (খ) তৎসম (গ) দেশী (ঘ) অর্ধ-তৎসম
উত্তর: (ঘ) অর্ধ-তৎসম
ব্যাখ্যা: অর্ধ-তৎসম শব্দ: যে-সব সংস্কৃত শব্দ কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে সেগুলোকে বলা হয় অর্ধ-তৎসম শব্দ। যেমনঃ জ্যোৎস্না>জ্যোছনা, শ্রাদ্ধ >ছেরাদ্দ, গৃহিণী>গিন্নী, বৈষ্ণব>বোষ্টম, কুৎসিত >কুচ্ছিত।
১৩. “জিজীবিষা’ শব্দটি দিয়ে বােঝায়–
(ক) জয়ের ইচ্ছা (খ) হত্যার ইচ্ছা (গ) বেঁচে থাকার ইচ্ছা (ঘ) শােনার ইচ্ছা
উত্তর: (গ) বেঁচে থাকার ইচ্ছা
ব্যাখ্যা: জিজীবিষা- বেঁচে থাকার ইচ্ছা। জিগীষা- জয়ের ইচ্ছা (প্রবল জিগীষার আত্মপ্রকাশ)। জিঘাংসা- বধ করার বা হত্যার ইচ্ছা। জিঘাংসু- হত্যা করতে চায় এমন; হত্যা করতে ইচ্ছুক।
১৪. “সর্বাঙ্গীণ” শব্দের সঠিক প্রকৃতি-প্রত্যয়
(ক) সর্বঙ্গ+ঈন (খ) সর্ব + অঙ্গীন (গ) সর্ব + ঙ্গীন (ঘ) সর্বাঙ্গ + ঈন
উত্তর: (ঘ) সর্বাঙ্গ + ঈন
ব্যাখ্যা: সর্বাঙ্গীণ’ শব্দের সঠিক প্রকৃতি প্রত্যয়- সর্বাঙ্গ+ঈন। সর্বাঙ্গীণ, সর্বাঙ্গীন/বিশেষণ পদ/সম্পূর্ণ, নিঁখুত; সর্বাঙ্গব্যাপী; পূর্ণাঙ্গ।
১৫. অন্যের রচনা থেকে চুরি করাকে বলা হয়–
(ক) বেতসবৃত্তি (খ) পতঙ্গবৃত্তি (গ) জলৌকাবৃত্তি (ঘ) কুম্ভিলকবৃত্তি
উত্তর: (ঘ) কুম্ভিলকবৃত্তি
ব্যাখ্যা: কুম্ভিলকবৃত্তি ( Plagiarism ): অন্যের রচনা থেকে চুরি করাকে বলা হয় । পতঙ্গবৃত্তি- পতঙ্গের মতো আগুনে ঝাঁপ দেওয়া; বিপদ না বুঝে মনোহর কিন্তু বিপজ্জনক বস্তুর মোহে ধাবিত হয়ে আত্মনাশ করা। বেতসবৃত্তি- [বিশেষ্য পদ] বেতসলতার ন্যায় নমনশীলতা, বেতসলতা যেমন জলস্রোতে নত হয় সেরূপ অল্পেই নতিস্বীকার।
১৬. উর্ণনাভ’—শব্দটি দিয়ে বুঝায়–
(ক) টিকটিকি (খ) তেলেপােকা (গ) উইপােকা (ঘ) মাকড়সা
উত্তর: (ঘ) মাকড়সা
ব্যাখ্যা: ঊর্ণনাভ:- [বিশেষ্য পদ]-সংস্কৃত শব্দ -এর অর্থ মাকড়সা।
১৭. চর্যাপদে কোন ধর্মমতের কথা আছে?
(ক) খ্রীষ্টধর্ম (খ) প্যাগনিজম (গ) জৈনধর্ম (ঘ) বৌদ্ধধর্ম
উত্তর: (ঘ) বৌদ্ধধর্ম
ব্যাখ্যা: ১৯০৭ সালে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আবিষ্কৃত “চর্যাপদ” হল বৌদ্ধ সহজিয়া পন্থীদের দেহ সাধনার বই। চর্যাপদের ধর্মমত নিয়ে প্রথম আলোচনা করেন ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ১৯২৭ সালে। বৌদ্ধ ধর্মমতে- শূন্যতা + করূণা= বোধিসত্ত্বলাভ ইহ জগতের সবকিছুই মূল্যহীন এই উপলব্ধি হচ্ছে- শূন্যতা। আর বস্তু জগতের লোভ লালসা থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে বলে – করূণা। এই দুয়ের সমন্বয়ে সাধনার চরম স্তরে পৌঁছানো যায়। অর্থাৎ বোধিসত্ত্ব লাভ হয়।
১ সংখ্যক চর্যায় লুইপা লিখেছেন, “কাআ তরুবর পঞ্চ বি ডাল চঞ্চল চিএ পইঠা কাল।।” অর্থাৎ দেহ হল তরুর মত পাঁচটা যার ডাল চঞ্চল চিত্তে প্রবেশ করে কাল। চর্যাপদে দেহ সাধনার কথা লেখা হয়েছে গূঢ় রহস্যপূর্ণ ভাষায়- যা সাধারণ মানুষের পক্ষে বোঝা প্রায় অসম্ভব।
১৮. উল্লিখিতদের মধ্যে কে প্রাচীন যুগের কবি নন?
(ক) কাহ্ণপাদ (খ) লুইপাদ (গ) শান্তিপাদ (ঘ) রমনীপাদ
উত্তর: (ঘ) রমনীপাদ
ব্যাখ্যা: কাহ্নপাদ বা কাহ্ন পা বা কৃষ্ণপাদ বা কৃষ্ণাচার্য্য চুরাশিজন বৌদ্ধ মহাসিদ্ধদের মধ্যে একজন ছিলেন। তিনি চর্যাপদের তেরোটি পদ রচনা করেন। তবে কাহ্নপা রচিত ২৪তম পদটি পাওয়া যায়নি। চর্যাপদে শান্তি পার একটি পদ গৃহীত হয়েছে। শান্তি পা বিক্রমশিলা বিহারের দ্বারপণ্ডিত ছিলেন। দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান অতীশ তার শিষ্য। এগার শতকের প্রথমে তিনি জীবিত ছিলেন। তার চর্যাপদের ভাষা প্রাচীন মৈথিলি। শান্তি পা রত্নাকর শান্তির সংক্ষিপ্ত নাম। চর্যাপদের প্রথম এবং ঊনত্রিশতম পদ লুই পার রচনা ।
১৯. উল্লিখিত কোন রচনাটি পুঁথি সাহিত্যের অন্তর্গত নয়?
(ক) ময়মনসিংহ গীতিকা (খ) ইউসুফ-জুলেখা (গ) পদ্মাবতী (ঘ) লাইলী মজনু
উত্তর: (ক) ময়মনসিংহ গীতিকা
ব্যাখ্যা: ১৯১৬ সালে ময়মনসিংহের কবি চন্দ্রকুমার দে প্রথম সেই এলাকার প্রচলিত পালাগান বা গাথাগুলি সংগ্রহ করেছিলেন। আচার্য দীনেশচন্দ্র সেনের উত্সাহে তা পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয়। এই সমস্ত পালা ময়মনসিংহ গীতিকা নামেই পরিচিতি লাভ করে। এটি লোকসাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত।
২০. জীবনীকাব্য রচনার জন্য বিখ্যাত:
(ক) ফকির গরীবুন্যাহ (খ) নরহরি চক্রবর্তী (গ) বিপ্রদাস পিপিলাই (ঘ) বৃন্দাবন দাস
উত্তর: (ঘ) বৃন্দাবন দাস
ব্যাখ্যা: বৃন্দাবন দাস একজন মধ্যযুগীয় এবং পদাবলী সাহিত্যের বিখ্যাত কবি ছিলেন। বর্ধমানের কাছে দেনুর গ্রামে ১৬ শতকের শুরুতে জন্ম। তাঁর রচিত শ্রীচৈত্যন্যদেবের জীবনী চৈত্যন্যভাগবত সবচেয়ে পুরোনো যা বৈষ্ণব সমাজে বেদব্যাস হিসাবে বিখ্যাত। তাঁর রচিত গোপিকামোহন কাব্যও বৈষ্ণব সমাজের আদরের বস্তু। তিনি কৃষ্ণকর্ণামৃতটীকা, নিত্যানন্দযুগলাষ্টক, রসকল্পসারস্তব, রামানুজগুরু-পরম্পরা প্রভৃতি কয়েকটি সংস্কৃত কাব্য রচনা করে যশ লাভ করেন।
২১. বৈষ্ণব পদাবলির সঙ্গে কোন ভাষা সম্পর্কিত?
(ক) সন্ধ্যাভাষা (খ) অধিভাষা (গ) ব্রজবুলি (ঘ) সংস্কৃত ভাষা
উত্তর: (গ) ব্রজবুলি
ব্যাখ্যা: ব্রজবুলি মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যের দ্বিতীয় কাব্যভাষা বা উপভাষা। ব্রজবুলি মূলত এক ধরনের কৃত্রিম মিশ্রভাষা। মৈথিলি ও বাংলার মিশ্রিত রূপ হলো ব্রজবুলি ভাষা। মিথিলার কবি বিদ্যাপতি (আনু. ১৩৭৪-১৪৬০) এর উদ্ভাবক। তার পদের ভাব ও ভাষার অনুসরণে বাংলা, উড়িষ্যা ও আসামে পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষ ভাগে ব্রজবুলি ভাষার সৃষ্টি হয়।
২২. বাংলা আধুনিক উপন্যাস-এর প্রবর্তক ছিলেন–
(ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (খ) প্যারীচাঁদ মিত্র (গ) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (ঘ) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
উত্তর: (ঘ) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
ব্যাখ্যা: বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (২৬ জুন ১৮৩৮ – ৮ এপ্রিল ১৮৯৪) ছিলেন উনিশ শতকের বিশিষ্ট বাঙালি ঔপন্যাসিক। বাংলা গদ্য ও উপন্যাসের বিকাশে তার অসীম অবদানের জন্যে তিনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করেছেন। তাকে সাধারণত প্রথম আধুনিক বাংলা ঔপন্যাসিক হিসেবে গণ্য করা হয়। তিনি বাংলা ভাষার আদি সাহিত্যপত্র বঙ্গদর্শনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। তিনি ছদ্মনাম হিসেবে কমলাকান্ত নামটি বেছে নিয়েছিলেন। তাকে বাংলা সাহিত্যের সাহিত্য সম্রাট বলা হয়। বঙ্কিমচন্দ্র রচিত আনন্দমঠ (১৮৮২) উপন্যাসের কবিতা বন্দে মাতরম ১৯৩৭ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস কর্তৃক ভারতের জাতীয় স্তোত্র হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
২৩. “কিন্তু আরম্ভের পূর্বেও আরম্ভ আছে। সন্ধ্যা বেলায় দীপ জ্বালার আগে। সকাল বেলায় সলতে পাকানাে” –বাক্যদ্বয় কোন রচনা থেকে উদ্ধৃত?
(ক) নৌকাডুবি (খ) চোখের বালি (গ) যোগাযোগ (ঘ) শেষের কবিতা
উত্তর: (গ) যোগাযোগ
ব্যাখ্যা: যোগাযোগ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত একটি সামাজিক উপন্যাস। এটি ১৯২৯ সালে (আষাঢ়, ১৩৩৬ বঙ্গাব্দ) প্রকাশিত হয়। এটি প্রথমে ১৩৩৪ বঙ্গাব্দের আশ্বিন মাস থেকে ১৩৩৫ বঙ্গাব্দের চৈত্র মাস পর্যন্ত বিচিত্রা মাসিকপত্রে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। প্রথম দুই সংখ্যায় এই উপন্যাসের শিরোনাম ছিল তিনপুরুষ। ১৩৩৪ বঙ্গাব্দের অগ্রহায়ণ সংখ্যায় রবীন্দ্রনাথ এই উপন্যাসের শিরোনাম পরিবর্তন করে নতুন শিরোনাম দেন যোগাযোগ।
২৪. মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস কোনটি?
(ক) একটি কালাে মেয়ের কথা (খ) তেইশ নম্বর তৈলচিত্র (গ) আয়নামতির পালা (ঘ) ইছামতী
উত্তর: (ক) একটি কালাে মেয়ের কথা
ব্যাখ্যা: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লিখিত প্রথম উপন্যাস একটি কালো মেয়ের কথা রচনা করেছিলেন শ্রেষ্ঠ কথাশিল্পী তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যয়। নির্যাতিতা ও সন্তানহারা কালো মেয়ে নাজমা ১৯৭১-এর বাংলাদেশের প্রতিরূপক হয়ে উঠেছে উপন্যাসে। তবে, উপন্যাসটিতে ব্যক্তিগত কথকতা ছাপিয়ে বড়ো হয়ে উঠেছে পূর্ব বাংলার সমাজ-রাজনীতি, গণহত্যা ও বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধ।
২৫. কালাে বরফ’ উপন্যাসটির বিষয়:
(ক) তেভাগা আন্দোলন (খ) ভাষা আন্দোলন (গ) মুক্তিযুদ্ধ (ঘ) দেশভাগ
উত্তর: (ঘ) দেশভাগ
ব্যাখ্যা: কথাসাহিত্যিক মাহমুদুল হক রচিত ‘কালো বরফ’ উপন্যাসে দেশভাগের পটভূমি ব্যাপকভাবে উঠে এসেছে আর উঠে এসেছে শেকড় হারাবার বেদনায় বিমর্ষ কিছু চরিত্র। শৈশব-কৈশোর তাড়িত আব্দুল খালেক নামে এক ব্যক্তির স্বাতন্ত্র্য সত্ত্বা উন্মোচিত হয়েছে এ উপন্যাসে। হিন্দু-মুসলমানের বিরোধ-দাঙ্গা দ্বেষ-ক্ষোভ এবং মিলন বর্নিত হয়েছে। শৈশবের স্মৃতিবিজড়িত দেশ বা মাটি— যে দেশ বা মাটি খালেকের জীবনের সবচেয়ে বড় অধ্যায়।
মফস্বলের কলেজ শিক্ষক প্রথাবিচ্ছিন্ন মানুষ আবদুল খালেক এবং তার অর্ন্তজগতের সম্রাট ‘পোকা’, এই নিয়েই ‘কালো বরফ’। ‘পোকা’ আবদুল খালেকের শৈশব। আবদুল খালেক একজন বিচ্ছিন্ন এবং নিঃসঙ্গ মানুষ, যে নিজেই নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে, বলা যায় খানিকটা পিছিয়ে পড়া দলের মানুষ। এই দলছুট মানুষ আবদুল খালেকের শৈশব-কৈশোর ও বর্তমান এবং উভয়ের সমন্বয়ে চিত্রায়িত কতকগুলো স্মৃতি-বিস্মৃতির দৃশ্যপটই ‘কালো বরফ’।
২৬. ঢাকা প্রকাশ সাপ্তাহিক পত্রিকাটির সম্পাদক কে?
(ক) কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার (খ) রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় (গ) শামসুর রাহমান (ঘ) সিকান্দার আবু জাফর
উত্তর: (ক) কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার
ব্যাখ্যা: ঢাকা প্রকাশ ঢাকা থেকে প্রকাশিত প্রথম বাংলা সংবাদপত্র। এর প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয় ১৮৬১ সালের ৭ মার্চ বাবুবাজারের ‘বাঙ্গালা যন্ত্র’ থেকে। পত্রিকার শিরোনামের নিচে একটি সংস্কৃত শ্লোকাংশ ‘সিদ্ধিঃ সাধ্যে সমামস্ত্ত’ (সাধ্য অনুযায়ী সিদ্ধিলাভ হোক) মুদ্রিত হতো। প্রতি সপ্তাহে গুরুবার অর্থাৎ বৃহস্পতিবার তা বের হতো। ডাকমাশুলসহ পত্রিকার বার্ষিক মূল্য ছিল ৫ টাকা। ঢাকা প্রকাশের প্রথম সম্পাদক ছিলেন কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার।
২৭. ‘জীবনস্মৃতি’ কার রচনা?
(ক) ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর (খ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (গ) বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (ঘ) রােকেয়া সাখাওয়াত হােসেন
উত্তর: (খ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
ব্যাখ্যা: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত আত্মজীবনীমূলক প্রবন্ধ গ্রন্হ- জীবনস্মৃতি (১৯১২)। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর রচিত আত্নজীবনীমূলক বর্ণনাধর্মী অসমাপ্ত রচনার নাম- আত্মচরিত।
২৮. দীনবন্ধু মিলের ‘নীলদর্পণ’ নাটকটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন কে?
(ক) প্যারীচাঁদ মিত্র (খ) মাইকেল মধুসূদন দত্ত (গ) প্রমথ চৌধুরী (ঘ) দ্বিজেন্দ্রলাল রায়
উত্তর: (খ) মাইকেল মধুসূদন দত্ত
ব্যাখ্যা: নীলদর্পণ নাটকটি লিখেন দীনবন্ধু মিত্র। নাটকটি ১৮৬০ সালে ঢাকা থেকে প্রথম প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশের মেহেরপুর অঞ্চলের নীলকরদের অত্যাচার ও নীলচাষীদের দুঃখ-কষ্ট নিয়ে রচিত হয়েছে। এই নাটকটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত।
২৯. “সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, সারাদিন আমি যেন ভালাে হয়ে চলি”- চরণ দু’টির রচয়িতা কে?
(ক) চণ্ডীচরণ মুনশী (খ) কাজী নজরুল ইসলাম (গ) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (ঘ) মদনমােহন তর্কালঙ্কার
উত্তর: (ঘ) মদনমােহন তর্কালঙ্কার
৩০. জসীম উদ্দীনের রচনা কোনটি?
(ক) যাদের দেখেছি (খ) পথে-প্রবাসে (গ) কাল নিরবধি (ঘ) ভবিষ্যতের বাঙালী
উত্তর: (ক) যাদের দেখেছি
ব্যাখ্যা: জসীম উদ্দীনের আত্নকথা: যাদের দেখেছি (১৯৫১) ঠাকুর বাড়ির আঙ্গিনায় (১৯৬১) জীবন কথা (১৯৬৪) স্মৃতিপট (১৯৬৪) স্মরণের সরণী বাহি (১৯৭৮)।অন্যদিকে, পথে প্রবাসে– অন্নদাশঙ্কর রায়, কাল নিরবধি– আনিসুজ্জামান, ভবিষ্যতের বাঙালী- এস ওয়াজেদ আলী।
৩১. ‘কিন্তু মনুষ্য কখনো পাষাণ হয় না’– উক্তিটি কোন উপন্যাসের?
(ক) রবীন্দ্রনাথের ‘চোখের বালি (খ) শরৎচন্দ্রের পথের দাবী’ (গ) শওকত ওসমানের ক্রীতদাসের হাসি (ঘ) বঙ্কিমচন্দ্রের ‘রাজসিংহ’
উত্তর: (ঘ) বঙ্কিমচন্দ্রের ‘রাজসিংহ’
ব্যাখ্যা: রাজসিংহ ১৮৮২ ঐতিহাসিক উপন্যাস। প্রথম প্রকাশ বঙ্গদর্শন পত্রিকায় (চৈত্র, ১২৮৪ – ভাদ্র, ১২৮৫)। পত্রিকায় অসমাপ্ত উপন্যাসটি সমাপ্ত করে ১৮৮২ সালে ৮৩ পৃষ্ঠার প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয়। দ্বিতীয় সংস্করণে পৃষ্ঠাসংখ্যা বেড়ে হয় ৯০। ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে চতুর্থ সংস্করণে পৃষ্ঠাসংখ্যা হয় ৪৩৪।
৩২. ইয়ংবেঙ্গল গােষ্ঠীভুক্ত ছিলেন কে?
(ক) অক্ষয় কুমার দত্ত (খ) এন্টনি ফিরঙ্গি (গ) মাইকেল মধুসূদন দত্ত (ঘ) কলম্বিসাসিংহ ঠাকুর
উত্তর: (গ) মাইকেল মধুসূদন দত্ত
ব্যাখ্যা: ইয়ং বেঙ্গল গোষ্ঠী ও হিন্দু কলেজ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দে হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। ইয়ংবেঙ্গলের প্রতিষ্ঠাতা- হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও(হিন্দু কলেজের শিক্ষক) ১৮৩১ সালে ইয়ংবেঙ্গল প্রতিষ্ঠিত হয়।ডিরোজিওর শিষ্যরাই ইয়ংবেঙ্গল নামে পরিচিত,ইয়ংবেঙ্গলরা মূলত ইংরেজ ভাবধারাপুষ্ট বাঙালী যুবক।
ইয়ংবেঙ্গলের আদর্শ- আস্তিকতা হোক আর নাস্তিকতা হোক, কোন জিনিসকে পূর্ব থেকে গ্রহণ না করা; জিজ্ঞাসা ও যুক্তি দিয়ে বিচার করা।তারা সাহিত্যে যুক্তিশীলতা ও মানবিকতাকে বড় করে ফুটিয়ে তুলেছেন। ডিরোজিওর প্রধান গ্রন্থ– ‘The Fakeer of Jungkeera’ হিন্দু কলেজের মেধাবী ছাত্র ও সাহিত্যিকরা হলেন– প্যারীচাদ মিত্র, দক্ষিণারঞ্জন মিত্র, কালিপ্রসাদ ঘোষ, হরচন্দ্র ঘোষ, মাধবচন্দ্র মল্লিক, রামতনু লাহিড়ী প্রমুখ।
৩৩. ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটি কোন সনে প্রথম প্রকাশিত হয়?
(ক) ১৯২৩ সনে (খ) ১৯২১ সনে (গ) ১৯১৯ সনে (ঘ) ১৯১৮ সনে
উত্তর: (খ) ১৯২১ সনে
ব্যাখ্যা: কলকাতার তালতলা লেনের ৩/৪ সি বাড়িটি বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতার আঁতুড়ঘর। ১৯২১ সালে দ্বিতল এই বাড়িটিতে বসে কবি লিখেছিলেন রক্তে দোলা জাগানিয়া ‘বল বীর.. চীর উন্নত মম শির।’
৩৪. ‘আগুন পাখি’– উপন্যাসটির রচয়িতা কে?
(ক) রাহাত খান (খ) হাসান আজিজুল হক (গ) সেলিনা হােসেন (ঘ) ইমদাদুল হক মিলন
উত্তর: (খ) হাসান আজিজুল হক
ব্যাখ্যা: হাসান আজিজুল হক (জন্ম: ২ ফেব্রুয়ারি, ১৯৩৯) একজন বাংলাদেশী ঔপন্যাসিক ও ছোট গল্পকার। তিনি বাংলা ভাষার অন্যতম প্রধান কথাসাহিত্যক হিসেবে পরিগণিত। ষাটের দশকে আবির্ভূত এই কথাসাহিত্যিক তার সুঠাম গদ্য এবং মর্মস্পর্শী বর্ণনাভঙ্গির জন্য প্রসিদ্ধ। জীবনসংগ্রামে লিপ্ত মানুষের কথকতা তার গল্প-উপন্যাসের প্রধানতম অনুষঙ্গ। রাঢ়বঙ্গ তার অনেক গল্পের পটভূমি।
আগুনপাখি (২০০৬) হক রচিত শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন ১৯৭০ খ্রিষ্টাব্দে। ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ সরকার তাকে একুশে পদকে ও ২০১৯ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে। এই অসামান্য গদ্যশিল্পী তার সার্বজৈবনিক সাহিত্যচর্চার স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে “সাহিত্যরত্ন” উপাধি লাভ করেন।
৩৫. একুশে ফেব্রুয়ারীর বিখ্যাত গানটির সুরকার কে?
(ক) সুবীর সাহা (খ) সুধীন দাস (গ) আলতাফ মাহমুদ (ঘ) আলতাফ মামুন
উত্তর: (গ) আলতাফ মাহমুদ
ব্যাখ্যা: ১. ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি।” এ গানের গীতিকার -আব্দুল গাফফার চৌধুরী। ২.’আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি।” এ গানের ১ম সুরকার- আব্দুল লতিফ। ৩. “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি।” গানটির বর্তমান -আলতাফ মাহমুদ।
এই ছিলো বিসিএস ৪০তম প্রিলির প্রশ্নোত্তর।আপনাদের পড়াশোনাকে আরও সহজ করার জন্য সবসময় আপনাদের পাশে আছে পড়াশোনাবিডি.কম